এক সম্পাদক প্রার্থী গ্রেপ্তার, আরেকজনকে খুঁজছে পুলিশ

হাতকড়া
প্রতীকী ছবি

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গণনা কখন হবে—এ নিয়ে বাদানুবাদ, হট্টগোল ও মারধরের ঘটনায় করা মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার পাঁচজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলও রয়েছেন।

ওই ঘটনায় আহত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান সিদ্দিকী বাদী হয়ে করা এই মামলার প্রধান আসামি সম্পাদক পদপ্রার্থী আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথী। তিনি যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামসের (পরশ) স্ত্রী। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আখতারুজ্জামান শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, নাহিদ সুলতানার বাসায় অভিযান চালালেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

তবে মামলার দুই নম্বর আসামি হলেন আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস কাজলকে শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল) থেকে সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দুই দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ গত বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় শেষ হয়। ভোট বাছাইপ্রক্রিয়া শেষ হয় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার পর। এরপর ওই রাতেই ভোট গণনা করা হবে কি না, এ নিয়ে কয়েকজন প্রার্থীর মধ্যে বাদানুবাদ হয়। এর জের ধরে শুক্রবার ভোরে আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে হট্টগোল ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান সিদ্দিকীসহ কয়েকজন আইনজীবী আহত হন। ওই পরিস্থিতিতে ভোট গণনা আর হয়নি। ব্যালট সিলগালা অবস্থায় পুলিশের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয় বলে জানান নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক আবুল খায়ের।

ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর প্রায় ৪৬ ঘণ্টা পর শনিবার বেলা তিনটার দিকে সমিতি ভবনের মিলনায়তন ও তিনটি হলরুমে একযোগে ভোট গণনা শুরু হয়। রাত ১১টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভোট গণনা চলছিল।  

এ নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ মনোনীত প্যানেল (সাদা প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর ও সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হক প্রার্থী হন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস প্রার্থী হন। এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে মো. ইউনুছ আলী আকন্দ ও মো. খলিলুর রহমান বাবলু (এম কে রহমান) এবং সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা যুথী ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভুইয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

মামলা, গ্রেপ্তার, রিমান্ড

শুক্রবার ভোরে মারধরের ঘটনায় ওই দিন বিকেলে শাহবাগ থানায় মামলা করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী। পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)।

মামলায় আসামি হিসেবে ২০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি আরও ৩০ থেকে ৪০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। আসামিদের মধ্যে দুজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলও রয়েছেন। এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে যুবলীগের পদধারী অন্তত তিনজন নেতা রয়েছেন। তাঁরা হলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, কেন্দ্রীয় সদস্য সাইদুর রহমান (জুয়েল) ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন (রানা)।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথীর নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে অন্য আসামিরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নিচতলার শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে বাদী সাইফুর রহমানসহ নির্বাচন উপকমিটির অন্য সদস্যদের গালাগাল করেন। এ সময় আসামিরা লোহার রড, লাঠি ও চেয়ার দিয়ে সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। তাঁর পরনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলা হয়।
মামলায় আরও বলা হয়, নির্বাচন উপকমিটির প্রধান আইনজীবী আবুল খায়েরকে অস্ত্রের মুখে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক হিসেবে নাহিদ সুলতানাকে নির্বাচিত ঘোষণা করতে বাধ্য করা হয়। নির্বাচন উপকমিটির সদস্যরা জীবন বাঁচাতে ভোট গণনা না করেই চলে যেতে বাধ্য হন।

শুক্রবার রাতেই গ্রিন রোডের বাসা থেকে মামলার আসামি আইনজীবী ওসমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ওই রাতেই বনানী ও ধানমন্ডি থেকে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাঁরা হলেন কাজী বশির আহমেদ (সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল), হাসানুজ্জামান, তরিকুল ইসলাম ও এনামুল হক।

এই পাঁচজনকে শনিবার বিকেলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ডিবি। পরে আদালত তাঁদের প্রত্যেকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

দুই আইনজীবী নেতার মুক্তি দাবি

শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বিকেলে গণমাধ্যমে একটি লিখিত বিবৃতি পাঠান। তাতে তিনি দাবি করেন, গত শুক্রবার ভোরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে নৈরাজ্যকর ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক ও একই পদে আরেক প্রার্থী নাহিদ সুলতানার সমর্থকদের মধ্যে। কিন্তু ওই ঘটনায় তাঁকে (রুহুল কুদ্দুস) এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আরও তিনজন নেতাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। ওসমান চৌধুরীকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের বাড়িতে বা চেম্বারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মো. রুহুল কুদ্দুস ও সমিতির সাবেক নির্বাহী সদস্য ওসমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গত রাতে এক বিবৃতিতে অবিলম্বে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও দুজনের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।