মহাস্থানে পাওয়া প্রাচীন শিলালিপি ৯৪ বছর ধরে কলকাতায়, বাংলাদেশ কি ফেরানোর উদ্যোগ নেবে
রাজধানীর বাংলা একাডেমি ভবনের নিচতলায় পশ্চিম পাশে জাতীয় সাহিত্য ও লেখক জাদুঘর। সেখানে দেশের প্রাচীনতম একমাত্র ব্রাহ্মীলিপি খচিত একটি প্রস্তরখণ্ডের ছবি রয়েছে। ছবির নিচে লেখা—‘মহাস্থান (বগুড়া)-তে প্রাপ্ত ব্রাহ্মীলিপি’। স্বাভাবিকভাবেই দেশের প্রাচীনতম লিপিসংবলিত প্রস্তরখণ্ডটি থাকার কথা ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরে অথবা বগুড়ার মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি জায়গার কোথাও সেটি নেই।
তাহলে শিলালিপিটি কোথায় আছে? এ প্রশ্নের উত্তর মিলল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালের অধ্যাপক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে। তিনি জানালেন, শিলালিপিটি রয়েছে কলকাতায় অবস্থিত ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে। এ তথ্যের ভিত্তিতে যোগাযোগ করা হয় ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম কলকাতায়। সেখানকার প্রত্নতত্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, শিলালিপিটি তাঁদের সংগ্রহে রয়েছে।
মহাস্থানগড়ে শিলালিপিটি খুঁজে পাওয়া যায় ১৯৩১ সালে, তখন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়নি। ছিল না জাতীয় জাদুঘর বা প্রত্নতত্ব বিভাগ নামে কোনো দপ্তরের অস্তিত্ব। তখন ভারত ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। সেসময় প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণের জন্য অঞ্চলভিত্তিক প্রশাসনিক দপ্তর ছিল কলকাতায়। ফলে শিলালিপিটি নিয়ে যাওয়া হয় ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে।
তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লুট হওয়া বা ঔপনিবেশিক আমলে উৎস দেশ থেকে নিয়ে যাওয়া প্রত্নসম্পদ বিনিময় বা সেগুলো উৎস দেশে ফেরত আনার চর্চা বাড়ছে। এ অবস্থায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে দেশের প্রাচীনতম এই শিলালিপি। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার উদ্যোগী হলে প্রাচীন এই প্রত্নসম্পদ দেশে ফেরানো সম্ভব কি না?
মহাস্থানগড় থেকে যেভাবে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ‘মহাস্থান’ শীর্ষক একটি প্রকাশনা থেকে জানা যায়, শিলালিপি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর।
ওই প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ১৮৭৯ সালে মহাস্থানগড়ে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ শুরু করেন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা ও প্রত্নতাত্ত্বিক আলেকজান্ডার কানিংহাম। এরপর সেসময়ের গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী কে সি নন্দীর তত্ত্বাবধানে ১৯০৭ সালে দ্বিতীয় দফায় খননকাজ চলে। যদিও সেটি প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ ছিল না। পরে ১৯২০ সালের ২২ নভেম্বর মহাস্থান গ্রামের গড়সহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় খননকাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে তৎকালীন সরকার। এর প্রায় আট বছর পর আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শাখার প্রথম তত্ত্বাবধায়ক কে এন দীক্ষিতের নেতৃত্বে ১৯২৮–২৯ সালে আরও একটি খননকাজ পরিচালিত হয়। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময়ে বহু নির্দশন পাওয়া গেলেও ব্রাহ্মীলিপি খচিত ওই শিলা পাওয়া যায়নি।
মহাস্থানগড়ের শিলালিপিটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ ডি আর ভান্ডারকারের ‘মৌর্য ব্রাহ্মী ইনস্ক্রিপশন অব মহাস্থান’ শীর্ষক লেখায়। ‘এপিগ্রাফিয়া ইন্ডিকা অ্যান্ড রেকর্ড অব দ্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডয়া’ বইয়ের ২১ নম্বর খণ্ডে তিনি লিখেছেন, মৌর্য যুগের ব্রাহ্মীলিপিটি ১৯৩১ সালের ৩০ নভেম্বর বগুড়া জেলার মহাস্থান গ্রামে পাওয়া যায়। ওই এলাকার বাসিন্দা বারু ফকির নামের একজন কৃষক কাজ করার সময় গড়ের ভেতর সেটি খুঁজে পান।
মহাস্থানগড়ের শিলালিপিটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়, ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ ডি আর ভান্ডারকারের ‘মৌর্য ব্রাহ্মী ইনস্ক্রিপশন অব মহাস্থান’ শীর্ষক লেখায়। ‘এপিগ্রাফিয়া ইন্ডিকা অ্যান্ড রেকর্ড অব দ্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডয়া’ বইয়ের ২১ নম্বর খণ্ডে তিনি লিখেছেন, মৌর্য যুগের ব্রাহ্মীলিপিটি ১৯৩১ সালের ৩০ নভেম্বর বগুড়া জেলার মহাস্থান গ্রামে পাওয়া যায়। ওই এলাকার বাসিন্দা বারু ফকির নামের একজন কৃষক কাজ করার সময় গড়ের ভেতর সেটি খুঁজে পান।
সে সময় আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধায়ক জি সি চন্দ্র এটি অধিদপ্তরের জন্য সংগ্রহ করেন এবং কিছুদিন কলকাতায় তাঁর কার্যালয়ে রাখেন। পরে সংস্থার মহাপরিচালকের আদেশে এটিকে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের প্রত্নতত্ত্ব শাখায় জমা করা হয়।
৯৪ বছরে প্রদর্শিত হয়েছে একবার
প্রাচীন ব্রাহ্মীলিপিটি বর্তমানে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে সংরক্ষিত রয়েছে বলে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা। তবে নিরাপত্তার কারণে নিদর্শনটিকে নিয়মিত প্রদশর্নীর জন্য উন্মুক্ত করা হয় না বলে জানান তিনি। ওই কর্মকর্তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ২০২২ সালে কলকাতা জাদুঘরের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বিশেষ প্রদর্শনিতে এটিকে একবার প্রদর্শন করা হয়েছিল। এর আগে কখনো প্রদর্শন করা হয়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই।
জাদুঘরসংশ্লিষ্ট আরেক ব্যক্তিও প্রায় অভিন্ন কথা বলেন। তাঁর ভাষ্য, ১৯৩১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ২০২২ সালেই প্রথমবারের মতো শিলালিপিটি জনসমক্ষে আনা হয়েছিল।
আজ আমরা যে বাংলা লিখি, সেই লিপির উদ্ভব অশোককালীন ব্রাহ্মীলিপি থেকে, যার একটি অন্যতম নির্দশন মহাস্থানের শিলালিপিটি। কারণ, মহাস্থানের শিলালিপিটি ব্রাহ্মীলিপিতে লেখা এবং এই লিপি পরিবর্তিত হয়ে একসময় বাংলা লিপির রূপ নিয়েছে।অধ্যাপক সুস্মিতা বসু মজুমদার, প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
যা লেখা আছে লিপিতে
শিলালিপির আকার সম্পর্কে ‘মৌর্য ব্রাহ্মী ইনস্ক্রিপশন অব মহাস্থান’ লেখায় আছে, এটি দৈর্ঘ্যে ৩ দশমিক ২৫ ইঞ্চি, প্রস্থে ২ দশমিক ২৫ ইঞ্চি এবং পুরুত্ব শূন্য দশমিক ৮৭৫ ইঞ্চি। এটি অর্ধচন্দ্রাকার শক্ত একটি চুনাপাথর। এর ওপর মৌর্য যুগের ব্রাহ্মীলিপিতে ৬টি লাইন লেখা।
লিপির প্রথম পাঠোদ্ধার করেন ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ ডি আর ভান্ডারকার। তাঁর মতে, এটি ছিল মৌর্য যুগের দুর্ভিক্ষকালীন এক প্রশাসনিক আদেশের লিপিবদ্ধ দলিল, যেখানে সম্বঙ্গীয় নামক অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য ও অর্থসহায়তার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সেই দুর্যোগ শেষে সেই সহায়তা ফেরত দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়।
তবে ডি আর ভান্ডারকারের দেওয়া পাথরটির বর্ণনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা বসু মজুমদার। তাঁর ‘মহাস্থান রেকর্ড রিভিসিটেড: ক্যুয়েরিং দ্য এম্পায়ার ফ্রম আ রিজিওনাল পার্সপেক্টিভ’ বইয়ে তিনি লিখেছেন, পাথরটি বালুকা পাথরও হতে পারে। শিলালিপিটির ভাষা প্রাকৃত ও উপভাষা মাগধী। যদিও মাগধী প্রাকৃতের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট৵ লেখায় অনুপস্থিত। লেখায় লিপি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকের অশোকীয় ব্রাহ্মীলিপি। ২০২২ সালে নতুনভাবে লিপিটির পাঠোদ্ধার করে সেটিকে আলোচনায় আনেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।
গত ২৬ জুন মুঠোফোনে সুস্মিতা বসু মজুমদারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, মহাস্থানলিপিতে একটি আদেশের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। যেটি তৎকালীন মগধ রাজ্য থেকে মহাস্থানে পাঠানো হয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছে, সম্বঙ্গীয় নামক একটি অঞ্চলে প্রচণ্ড দুর্যোগ (সম্ভবত বন্যা) এসেছে। তাদের সাহায্য করার জন্য পুণ্ড্রনগরের (মহাস্থানগড়) কোষ্ঠাগার (শস্যের গোলা) থেকে ধান অনুদান হিসেবে দেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে কোষাগার থেকে সামান্য অর্থ (তাম্রমুদ্রা) সহায়তা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রাচীন নিদর্শন ফেরত পাওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি সনদ হলো ‘ইউনেসকো ১৯৭০ কনভেনশন অন কালচারাল প্রোপার্টি’। ইউনেসকোর তথ্য বলছে, এই কনভেনশনের আওতায় এরই মধ্যে ইরাক, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশ তাদের চুরি বা ঔপনিবেশিক আমলে নিয়ে যাওয়া প্রত্নসম্পদ ফেরত আনতে পেরেছে। এ ক্ষেত্রে জার্মানি ও যুক্তরাজ্য নাইজেরিয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছে বিখ্যাত বেনিন ব্রোঞ্জ, নেদারল্যান্ডস ইন্দোনেশিয়াকে ফিরিয়েছে ‘লম্বক ধন’, যুক্তরাষ্ট্র ফেরত দিয়েছে ইরাকের ‘গিলগামেশ ট্যাবলেট’।
অধ্যাপক সুস্মিতা বসু মজুমদারের মতে, এই কোষাগার ছিল বঙ্গ এলাকায়। তিনি বলেন, নির্দেশনা মগধ থেকে মহাস্থানের মহামাত্রকে (উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা) দেওয়া হয়েছিল। মহামাত্র এই নির্দেশনা নথি হিসেবে রেখে ভুক্তভোগীদের ধান দিয়েছিলেন, যেন পরবর্তী সময়ে নিরীক্ষায় (অডিট) স্বচ্ছতা থাকে।
প্রসঙ্গত ধারণা করা হয়, সম্বঙ্গীয় অঞ্চলটি ঢাকার আশপাশে অথবা উয়ারী-বটেশ্বরের কাছে কোথাও হতে পারে।
বাংলাদেশ কি ফেরানোর উদ্যোগ নেবে
প্রাচীন নিদর্শন ফেরত পাওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি সনদ হলো ‘ইউনেসকো ১৯৭০ কনভেনশন অন কালচারাল প্রোপার্টি’। ইউনেসকোর তথ্য বলছে, এই কনভেনশনের আওতায় এরই মধ্যে ইরাক, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশ তাদের চুরি বা ঔপনিবেশিক আমলে নিয়ে যাওয়া প্রত্নসম্পদ ফেরত আনতে পেরেছে। এ ক্ষেত্রে জার্মানি ও যুক্তরাজ্য নাইজেরিয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছে বিখ্যাত বেনিন ব্রোঞ্জ, নেদারল্যান্ডস ইন্দোনেশিয়াকে ফিরিয়েছে ‘লম্বক ধন’, যুক্তরাষ্ট্র ফেরত দিয়েছে ইরাকের ‘গিলগামেশ ট্যাবলেট’।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশও এই কনভেনশনের সদস্য। ফলে চাইলে কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চ্যানেলের মাধ্যমে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে আইনি জটিলতার বিষয়গুলোকে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন তারা।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারের একজন প্রতিনিধিকে শিলালিপিটি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। তবে ওই প্রতিনিধি এতে আগ্রহ দেখাননি। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে শিলালিপি ফেরত চাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একজন পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, ভারত–বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তি, ১৯৭২–এর আওতায় শিলালিপিটি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তবে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া কূটনৈতিক চ্যানেলে হতে হবে।
এ বিষয়ে গত ২৮ জুন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো.আবদুল মোক্তাদেরের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাবিনা আলমের মুঠোফোনে একাধিকার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব অনেক
ব্রাহ্মীলিপিকে বলা হয় বাংলালিপির আদি উৎস। ইতিহাসবিদেরা বলছেন, ব্রাহ্মীলিপি খচিত এমন নির্দশন বিরল। বাংলা ভাষার ‘জননী’ হিসেবে তাই শিলালিপির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক।
এ বিষয়ে অধ্যাপক সুস্মিতা বসু মজুমদার বলেন, ‘আজকে আমরা যে বাংলা লিখি, সেই লিপির উদ্ভব অশোককালীন ব্রাহ্মীলিপি থেকে, যার একটি অন্যতম নির্দশন মহাস্থানের শিলালিপিটি। কারণ, মহাস্থানের শিলালিপিটি ব্রাহ্মীলিপিতে লেখা এবং এই লিপি পরিবর্তিত হয়ে একসময় বাংলা লিপির রূপ নিয়েছে।’
প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বলছেন, শিলালিপিটি শুধু প্রাচীন বাংলার প্রশাসনিক দক্ষতার দলিল নয়; বরং একটি রাজ্য ও নাগরিকের মধ্যকার সম্পর্কের লিখিত চিত্র। তাই দেশে পাওয়া এমন নিদর্শন দেশের বাইরে থেকে গেলে ইতিহাস-সচেতনতা ও জাতীয় পরিচয়ের প্রশ্নে তা একধরনের ক্ষতি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মহাস্থান লিপি দেশের একমাত্র প্রাচীনতম লিপি। এটি প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘরের জন্য ‘মাস্টারপিস’।
২০২২ সালে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবসে এক সেমিনারে তিনি শিলালিপিটি ফিরিয়ে আনার জানিয়েছিলেন উল্লেখ করে এই প্রত্নতত্ত্ববিদ বলেন, দেশের প্রাচীনতম ইতিহাসের আকর জিনিস বিদেশে থাকবে কেন? বাংলাদেশ সরকারকে শিলালিপিটি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।