ফি বাড়াচ্ছেন অবেদনবিদেরা, বাড়বে অস্ত্রোপচারের খরচ

অস্ত্রোপচারপ্রতীকী ছবি: রয়টার্স

চট্টগ্রামে অস্ত্রোপচারের সময় সার্জনের সঙ্গে যুক্ত অবেদনবিদ চিকিৎসকেরা তাঁদের ফি বাড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। ১৫ মে অবেদনবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলোজি ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড পেইন ফিজিশিয়ানস (বিএসএ-সিসিপিপি) চট্টগ্রাম শাখা ফি বাড়ানো ঘোষণা দেয়। প্রতিটি অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অবেদনবিদ ফি ৫০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা আসে। এরপর থেকে নতুন ফি নিয়ে সার্জন এবং বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অবেদনবিদদের মতপার্থক্য তৈরি হয়। বর্ধিত ফি রোগীদের জন্য বোঝা হয়ে যাবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

অবেদনবিদদের দাবি, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে পুরোনো নিয়মে অস্ত্রোপচারের ফি পেয়ে আসছেন। অস্ত্রোপচারের খরচ বাড়লেও তাঁদের ফি বাড়েনি। মূলত অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসকেরা যা দেন, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে অবেদনবিদদের। আবার রোগী মারা গেলেও তার দায় নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় রোগীর সুরক্ষা এবং শৃঙ্খলার জন্য বর্ধিত ফি তালিকা বাস্তবায়ন দরকার বলে মনে করছে বিএসএ-সিসিপিপি।

অবেদনবিদদের যদি বাড়তি ফি দিতে হয়, তা রোগীদের কাছ থেকে নিয়েই দিতে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। এতে চিকিৎসার খরচ বাড়বে।

আবার সার্জনেরা মনে করেন, একজন রোগীর অস্ত্রোপচারের আগে-পরে এবং অস্ত্রোপচারকালে যাবতীয় দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে বর্তায়। তাই রোগীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকতে হয় তাঁদের। অবেদনবিদ অস্ত্রোপচার করার সময়ে থাকেন। সে কারণে সার্জনদের খরচটা স্বাভাবিকভাবে বেশি। অবেদনবিদদের যদি বাড়তি ফি দিতে হয়, তা রোগীদের কাছ থেকে নিয়েই দিতে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। এতে চিকিৎসার খরচ বাড়বে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অধ্যক্ষ ও হাসপাতালটির প্রসূতি বিভাগের প্রধান সাহেনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, অবেদনবিদেরা যে দাবি করছেন, তা কিছুটা যৌক্তিক। আবার বিষয়টা এমন নয় যে একজন অধ্যাপক যেমন ফি পাবেন জুনিয়রও তেমন ফি পাবেন। তাঁরা যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে অস্ত্রোপচার অনুযায়ী ভাগ করেছেন। কিন্তু সিনিয়র-জুনিয়র একই ফি পেতে পারেন না। আর দিন শেষে এই বাড়তি ফি রোগীর কাছ থেকে সার্জনকে আদায় করতে হবে। আবার সার্জনদের কাজ অনেক বেশি। সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে।

অ্যানেসথেসিয়া বিষয়টা আমাদের এখানে খুবই উপেক্ষিত। একজন সার্জন লাখ টাকার অস্ত্রোপচার করলেও আমাদের মাত্র ৫ হাজার টাকা দেন। অথচ অস্ত্রোপচারের আগে-পরে এবং অস্ত্রোপচারের সময়ও আমাদের দায়িত্ব রয়েছে।
বিএসএ-সিসিপিপি চট্টগ্রামের সভাপতি মোহাম্মদ শরীফ

অ্যাসোসিয়েশন থেকে যে বিজ্ঞপ্তি ও ফি তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়, ‘বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের ফি যুগোপযোগী করার কোনো বিকল্প নেই। এই অবস্থায় ১৬ মে থেকে নতুন ধার্যকৃত অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ফি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’

অ্যাসোসিয়েশনের চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি মোহাম্মদ শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক প্রণয় কুমার দত্ত বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন। জানতে চাইলে বিএসএ-সিসিপিপি চট্টগ্রামের সভাপতি মোহাম্মদ শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ্যানেসথেসিয়া বিষয়টা আমাদের এখানে খুবই উপেক্ষিত। একজন সার্জন লাখ টাকার অস্ত্রোপচার করলেও আমাদের মাত্র ৫ হাজার টাকা দেন। অথচ অস্ত্রোপচারের আগে-পরে এবং অস্ত্রোপচারের সময়ও আমাদের দায়িত্ব রয়েছে।’

নতুন ধার্য করা ফি তালিকায় দেখা যায়, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের সময় অবেদনবিদ ফি ধরা হয়েছে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা। আগে এ জন্য তিন হাজার টাকা পর্যন্ত পেতেন একজন অবেদনবিদ। আবার টনসিল অস্ত্রোপচারের সময় ছয়-আট হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এ ক্ষেত্রে তিন-চার হাজার টাকা দেওয়া হতো এ জন্য।

নেপাল, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অবেদনবিদের ফি আমাদের দেশের চেয়ে বেশি। আমরা বিষয়টা নিয়ে অনেক আগে থেকে সার্জনদের সঙ্গে বৈঠক করে আসছি। এখনো কথাবার্তা চলছে। আশা করি, সবার সমন্বয়ে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে।
বিএসএ-সিসিপিপি চট্টগ্রামের সহসভাপতি অলক নন্দী

সাধারণ অ্যান্ডোস্কপি অস্ত্রোপচারের জন্য নতুন ফি তিন হাজার টাকা ধরা হয়েছে। কলোনোস্কপির জন্য ফি চার হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। অ্যাপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে পাঁচ-সাত হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। এ জন্য আগে মাত্র এক-দুই হাজার টাকা অবেদনবিদ ফি দেওয়া হতো।

বিএসএ-সিসিপিপি চট্টগ্রামের সহসভাপতি অলক নন্দী বলেন, ‘নেপাল, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অবেদনবিদের ফি আমাদের দেশের চেয়ে বেশি। আমরা বিষয়টা নিয়ে অনেক আগে থেকে সার্জনদের সঙ্গে বৈঠক করে আসছি। এখনো কথাবার্তা চলছে। আশা করি, সবার সমন্বয়ে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি মুজিবুল হক খান বলেন, ‘অবেদনবিদদের নতুন ফি নির্ধারণ নিয়ে একটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা এটা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটা সমাধানের চেষ্টা করব।’

বাড়বে খরচ

চিকিৎসকভেদে এক একটা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার ২৫-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। ওই প্যাকেজের মধ্যেই অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ও তাঁর সহকারী চিকিৎসক, অবেদনবিদ ও হাসপাতাল বা ওটি খরচ থাকে। একাধিক প্রসূতি চিকিৎসক জানান, বাড়তি ফি যদি দাবি করেন অবেদনবিদেরা সেটা তিন হাজার হোক বা পাঁচ হাজার টাকা হোক, তা রোগীর কাছ থেকে নিয়েই দিতে হবে। ফলে রোগীর চিকিৎসা খরচ বাড়বে।