বাঘের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো পেট ভরবে না

তাঁর নাম কামাল হোসেন। সবাই ডাকে ‘টাইগার কামাল’ নামে। কারণ, সুন্দরবনে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে ফিরেছিলেন তিনি। ১১ বছর পর আবার সুন্দরবনে মাছ ধরার পেশাতেই যেতে হচ্ছে তাঁকে। কারণটা জীবিকা। আবার সুন্দরবনে যাওয়ার সাহসও তিনি দেখাচ্ছেন। খুলনার কয়রা উপজেলার এই ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইমতিয়াজ উদ্দিন

কামাল হোসেন

প্রশ্ন :

কেমন আছেন?

কামাল হোসেন: ভালো। সেদিন আপনার সঙ্গে গল্প করছিলাম, সেটা পত্রিকায় ছেপেছে। আমাকে অনেকেই মুঠোফোনে সেই খবর দেখিয়েছে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

কেউ কিছু বলেছে?

কামাল হোসেন: পরিচিত অনেক লোক বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছে। লোকেরা বলেছে, আমি সাহসী মানুষ। অনেকে সাহায্য করতে চেয়েছে।

প্রশ্ন :

কত বছর বয়স থেকে সুন্দরবনে যান?

কামাল হোসেন: মনে নেই। তবে বুঝতে শেখার পর থেকে বাপ-দাদাদের সঙ্গে সুন্দরবনের মাছ-কাঁকড়া ধরতে ধরতে বড় হয়েছি।

প্রশ্ন :

হঠাৎ করে সামনে বাঘ দেখার পর কী মনে হয়েছিল?

কামাল হোসেন: আমি মাথা নিচু করে বনের মধ্যে খালে মাছ ধরছিলাম। হঠাৎ উৎকট একটা গন্ধ নাকে আসে। মাথা উঁচু করে খালপাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখি, বাঘ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু মনে করার আগেই বাঘটি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমি চিত হয়ে খালের ভেতর কাদায় পড়ে যাই। তখন মনে হয়েছিল, আর মনে হয় বাঁচব না। পরিবারের সবার চেহারা চোখের সামনে ভাসছিল।

প্রশ্ন :

তারপর?

কামাল হোসেন: বাঘ প্রথমে আমার মাথার বাঁ পাশে থাবা দিয়ে ছিলে ফেলেছিল। প্রায় ২০ মিনিট বাঘ আমার পেটের ওপর বসে ছিল। তখনো আমার হুঁশ ছিল।

প্রশ্ন :

আপনার সঙ্গে থাকা অন্য জেলেরা তখন কী করছিলেন?

কামাল হোসেন: আমার সঙ্গে শুধু কয়রার রুহুল আমিন সরদার নামের একজন ছিলেন। কাকা চিৎকার করতে শুরু করেন। তিনি নদীর কাদামাটি দুই হাত দিয়ে তুলে ছুড়ে মারতে থাকেন বাঘটির দিকে। সম্ভবত সেই কাদামাটি বাঘের চোখে গিয়েছিল। তাই আমাকে ফেলে রেখে বাঘটি চলে যায়। তখন আমার আর জ্ঞান ছিল না।

প্রশ্ন :

রুহুল আমিন সরদারের সঙ্গে এখন দেখা হয়?

কামাল হোসেন: হ্যাঁ। যখনই কাকার সঙ্গে দেখা হয়, আমি তাঁকে জড়িয়ে ধরি। তিনি সেদিন আহত অবস্থায় আমাকে নদীর চর থেকে তুলে নিয়ে গ্রামে ফিরেছিলেন। পরে পরিবারের লোকেরা আমাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কয়েক দিন চিকিৎসার পর আমার জ্ঞান ফিরেছিল।

প্রশ্ন :

আপনি তো সুন্দরবনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

কামাল হোসেন: হ্যাঁ। মানুষের খেতে কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহের কথা ভাবছিলাম। বাপ-ভাইয়েরাও নিষেধ করে বলেছিলেন, ‘আর বনে যাস না।’

প্রশ্ন :

এখন আবার সুন্দরবনে যান কেন?

কামাল হোসেন: বাধ্য হয়ে। দিনমজুরি করার মতো জোর শরীরে পাই না। বেশি পরিশ্রম করলে মাথা যন্ত্রণা করে, শরীরে ব্যথা হয়, চোখে ঝাপসা দেখি। বনের কাজে আমার তেমন কোনো ক্লান্তি আসে না। বনের মধ্যে মাছ বা কাঁকড়া ধরার সময় নৌকায় বসে কাজ করি।

প্রশ্ন :

জঙ্গলে যেতে ভয় লাগে না?

কামাল হোসেন: বাঘের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো পেট ভরবে না। ঘরে স্ত্রী ও তিন সন্তান আছে। তারা খাবে কী?

প্রশ্ন :

এখন সবাই আপনাকে ‘টাইগার কামাল’ বলে ডাকে। নামটা কেমন লাগে?

কামাল হোসেন: ভালোই লাগে।