গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত, মনে করেন পাকিস্তানের বিবেকবান মানুষেরা

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘ভয়েস অব কনশান্স’ প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে (বাঁ থেকে) আসাদুজ্জামান নূর, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবির, সারা যাকের ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। ঢাকা, ৯ ডিসেম্বরছবি: মানসুরা হোসাইন

পাকিস্তানে কিছু বিবেকবান মানুষ আছেন, যাঁরা মনে করেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া উচিত। সব দেশেই কিছু মানুষ থাকেন, যাঁরা মানুষের পক্ষে থাকেন।

‘ভয়েস অব কনশান্স’ প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী শেষে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। আজ শনিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এ প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনী শেষে ওই আলোচনার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা পাকিস্তানের মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, লেখকসহ বিভিন্ন পেশা শ্রেণির মানুষের বক্তব্য নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘ভয়েস অব কনশান্স’ প্রামাণ্যচিত্রটি। এটি পরিচালনা করেছেন লেখক, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

এ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, পাকিস্তানে গিয়ে এ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করতে ১০ বছর সময় লেগেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এটি নির্মাণ করে মনে হয়েছে, পাকিস্তানে কিছু বিবেকবান মানুষ আছেন। তাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইছেন। তাঁরা বলছেন, পাকিস্তানকে এ গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

শাহরিয়ার কবির জানান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আমন্ত্রণে পাকিস্তানের লেখক আনাম জাকারিয়া বাংলাদেশে এসে গণহত্যার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। যাঁরা গণহত্যার শিকার তাঁদের কয়েকজনের স্বজনের সঙ্গে কথা বলেন। পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে তিনি ৪০০ পৃষ্ঠার একটি বই লেখেন। ২০১৯ সালে বইটি প্রকাশিত হওয়ার পরে এই লেখক ও তাঁর স্বামীকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। একইভাবে ১৯৭১ সালে মানবাধিকারের পক্ষে থাকা পাকিস্তানের নাগরিকদের জেল খাটা, দেশ ছাড়তে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন শাস্তি পেতে হয়েছে।

শাহরিয়ার কবির একটি জরিপের কথা উল্লেখ করে জানান, ২০১৩ সালে পাকিস্তানের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ চাইতেন গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ২০২১ সালে এটি হয়েছে ৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ সংখ্যাটি বাড়ছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের এমন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে শুধু পাকিস্তান নয় বাংলাদেশেও তেমন একটা সহায়তা পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, সব দেশেই কিছু মানুষ থাকে যারা মানুষের পক্ষে থাকে। তবে পাকিস্তানের বেশির ভাগ মানুষ এখনো পাকিস্তানি। তিনি আরও বলেন, শাহরিয়ার কবিরের প্রামাণ্যচিত্রটি ইউটিউবে দিতে হবে। এতে করে পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের সামনে বিষয়টি আনা সম্ভব হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফও মুক্তিযুদ্ধের কথা বেশি করে অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এতে ইতিহাসের বিকৃতি কিছুটা কমবে বলে মনে করেন তিনি।

আজ আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিবাদ দিবস থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিজয় উৎসব উদ্‌যাপন করছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। উৎসবের প্রথম দিন আজ শাহরিয়ার কবিরের প্রামাণ্যচিত্রটি প্রদর্শিত হয়। প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর উপস্থিত ছিলেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব সারা যাকের।

‘ভয়েস অব কনশান্স’ প্রামাণ্যচিত্রে পাকিস্তানের এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান, মানবাধিকারকর্মী তাহিরা মাজহার আলী খান, কবি ও সাংবাদিক আহমাদ সালিম, বিচারক সৈয়দ আসিফ শাহকার, রাজনীতিবিদ নাসিম আখতার মালিক, সাংবাদিক আই এ রহমান, মোহাম্মদ আরিফ আজাকিয়া, হামিদ মীর, সৈয়দ আহমেদ, আইনজীবী জাফর মালিক, নৃত্যশিল্পী সীমা কিরমানি, মানবাধিকারকর্মী আসমা জাহাঙ্গীর, তাহিরা আবদুল্লাহ প্রমুখ কথা বলেছেন।