কায়ায় প্রকৃতি ও জীবনের নান্দনিক রূপ নিয়ে প্রদর্শনী

শিল্পকর্মগুলো ঘুরে দেখছেন অতিথিরা। শিল্পী সোহাগ পারভেজ ছবির পেছনের গল্পটা অতিথিদের বলছেন
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

দেশের নয়নাভিরাম নিসর্গ ও মানুষের জীবনযাত্রার নান্দনিক রূপ শিল্পকর্মে তুলে ধরেছেন শিল্পী সোহাগ পারভেজ। তাঁর সাম্প্রতিক শিল্পকর্ম নিয়ে ‘প্যানোর‌্যামিক বেঙ্গল’ নামের নবম একক প্রদর্শনী আজ শুক্রবার থেকে শুরু হলো উত্তরার গ্যালারি কায়াতে।

তেলরং, অ্যাক্রিলিক, জলরং, চারকোল ও রেখাচিত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমের ৫৬টি শিল্পকর্ম নিয়ে এই প্রদর্শনী। প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কথাশিল্পী আনিসুল হক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নিসর্গের বহু স্তবস্তুতি আমরা বহুকাল ধরে কবিদের কবিতায়, গানে পেয়েছি। শিল্পী সোহাগ পারভেজ দেশের প্রকৃতির সৌন্দর্য ও মানুষের জীবনযাত্রাকে আমাদের সামনে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। আমরা শহরের নানা রকম দূষণ ও কলুষতার মধ্যে থাকি। এই ছবিগুলোর দিকে তাকালে মন শুদ্ধ হয়ে ওঠে। একটা নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দ ও অভিজ্ঞতা পাই। সময় চলে যায়, কিন্তু ছবি টিকে থাকে। এই ছবিগুলো সে রকম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন অভিনয়শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইএর সহসভাপতি এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি শমি কায়সার। তিনি বলেন,শিল্পী সোহাগ পারভেজ নিবিড় পর্যবেক্ষণের ভেতর দিয়ে তাঁর জলরং ও চারকোলের কাজে গ্রামের প্রান্তিক মানুষের যাপিত-জীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ ও বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে তাঁর নদী ও নৌকার ছবিগুলো এমনভাবে এসেছে, যা অনেক মানুষের স্মৃতির সঙ্গে মিলে মিশে যায়। তাঁর আঁকা ছবি মুগ্ধ হওয়ার মতো।

শিল্পী সোহাগ পারভেজ নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তিনি দেশের সমুদ্র, পাহাড়, বনাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে নিসর্গের সৌন্দর্য ও মানুষের জীবনযাত্রার গল্প তাঁর কাজে তুলে আনেন। সব সময় সঙ্গে স্কেচ খাতা থাকে। প্রচুর ড্রয়িং করেন। সেই শত শত ড্রয়িং, কম্পোজিশন থেকে পরে দৃশ্যকল্পগুলো তাঁর সৌন্দর্যবোধ ও আঁকার দক্ষতায় ফুটিয়ে তোলেন।

ঘণ্টা বাজিয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কথাশিল্পী আনিসুল হক
ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

সোহাগ পারভেজ বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করলেও জলরং, চারকোল ও  অঙ্কনে বিশেষ পারদর্শী। চারকোলের বড় আকারে বেশ কয়েকটি কাজ আছে এবার। আর জলরং তো আছেই। এই প্রদর্শনীতে বান্দরবান, সাঙ্গু নদ, লামার পাহাড়ি এলাকার প্রকৃতি, সেখানকার বাসিন্দাদের বাড়িঘর, জীবনযাত্রার নানা গল্প উঠে এসেছে। এ ছাড়া আছে সাঁওতাল নর-নারী, নৌকা, মাঝিমাল্লা, বিলঝিল, বর্ষার মেঘলা আকাশ, মহিষের পাল নিয়ে ঘরে ফেরা রাখাল। আরও আছে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, বুড়িগঙ্গার বুকে অধুনা বিলুপ্ত স্টিমার, ঝড়ের রাতসহ বহু কৌণিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা স্বদেশের লাবণ্যময় মুখ।  

গ্যালারি কায়ার পরিচালক গৌতম চক্রবর্তী বললেন, সোহাগ পারভেজ পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান তরুণ শিল্পী। একজন শিল্পীর বহুদূর অবধি যেতে যা প্রয়োজন, তার সবই তাঁর মধ্য রয়েছে। কায়ায় এটি সোহাগ পারভেজের তৃতীয় একক প্রদর্শনী। ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রদর্শনী প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

সোহাগ পারভেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। দেশের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে ৭৫টি যৌথ প্রদর্শনীতে তিনি অংশ নিয়েছেন। অংশ নিয়েছেন ৫৫টি আর্ট ক্যাম্পে। প্রকৃতি ও মানুষের জীবন চর্চায় নিমগ্ন হয়ে শিল্পের সাধনা করে চলেছেন তিনি।