বারনামাকে অধ্যাপক ইউনূসের সাক্ষাৎকার
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ
দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য মালয়েশিয়ার প্রভাব, বিশেষ করে দেশটির আসিয়ান সভাপতির ভূমিকা কাজে লাগাতে চাইছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী গ্রহণের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা ও আসিয়ানে নেতৃত্বপূর্ণ অবস্থান একযোগে দেশটিকে একটি অনন্য অবস্থান দিয়েছে। বিষয়টি একটি বিস্তৃত আঞ্চলিক (সমস্যা) সমাধানে পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী এ মানবিক সংকট শুধু বাংলাদেশকেই প্রভাবিত করছে না; বরং মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি আসিয়ান সদস্য দেশকে প্রভাবিত করছে।
অধ্যাপক ইউনূস মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা বারনামার সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়া পুরো আলোচনায় (রোহিঙ্গা ইস্যুতে) তার প্রভাব কাজে লাগাবে; যেন আমরা এ সমস্যা সমাধান করতে পারি, সেই বিষয়টি নিশ্চিত হয়।’
সাক্ষাৎকারটি অতিসম্প্রতি মালয়েশিয়ায় মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি সফর শেষ হওয়ার আগে নেওয়া। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ইউনূসের সঙ্গে এ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দুরার রাজ, ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সার্ভিসের সম্পাদক ভুন মিয়াও পিং ও বারনামার ইকোনমিক নিউজ সার্ভিসের সহকারী সম্পাদক কিশো কুমারী সুশেদারামের নেতৃত্বে।
আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়া পুরো আলোচনায় (রোহিঙ্গা ইস্যুতে) তার প্রভাব কাজে লাগাবে; যেন আমরা এ সমস্যা সমাধান করতে পারি, সেই বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
মুহাম্মদ ইউনূস সতর্ক করে বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর চলমান সংঘর্ষের কারণে। এর ফলে রোহিঙ্গারা নতুন করে বাংলাদেশে পাড়ি দিচ্ছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘গত ১৮ মাসেই দেড় লাখ নতুন রোহিঙ্গা দেশে এসেছেন। এরই মধ্যে দেশে থাকা ১২ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তাঁরা।
‘এ সমস্যা ক্রমেই আরও জটিল হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা, যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের (রোহিঙ্গা শরণার্থী) দেখভালের সব তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে। তাই এটি আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা’, বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজতে আগামী কয়েক মাসে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মেলনের প্রথমটি এ মাসের শেষের দিকে কক্সবাজারে হবে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার (রোহিঙ্গা শরণার্থীদের) অষ্টম বার্ষিকীর সময়ের মিল রয়েছে। আট বছর আগে এ সময় থেকেই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে শুরু করে।
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজতে আগামী কয়েক মাসে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে। প্রথমটি এ মাসের শেষের দিকে কক্সবাজারে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার (রোহিঙ্গা শরণার্থীদের) অষ্টম বার্ষিকীর সময়ের মিল রয়েছে। আট বছর আগে এ সময় থেকেই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয় দিতে শুরু করে।
উচ্চস্তরের দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ সভার ফাঁকে এবং তৃতীয়টি বছরের শেষদিকে কাতারের দোহায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন উদ্যোগে খুব কম অগ্রগতি হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারের চলমান সশস্ত্র সংঘাতের কারণে এটি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
দীর্ঘস্থায়ী এ মানবিক সংকট শুধু বাংলাদেশকেই প্রভাবিত করছে না; বরং মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি আসিয়ান সদস্য দেশকে প্রভাবিত করছে।
মালয়েশিয়া ১৯৫১ সালের জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রোটোকলের স্বাক্ষরকারী না হলেও মানবিক কারণে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দিচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকটের সূচনা হয় ২০১৭ সালে, মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করার পর। এ অভিযানের জেরে প্রাণ বাঁচাতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন।