দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির অনুমোদন নেই। তা সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। এরই মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও রাজনীতিতে জড়িত হতে চান না। তবে ছাত্রলীগ বলছে, শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে কাজ করার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি করা হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ছাত্ররাজনীতি করার সুযোগ দিতে হবে।

গত শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রলীগের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বার্ষিক সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনের আগের দুই দিন গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হাকিম।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে সমালোচনা করেন। ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ ও আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

কেউ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
মো. ইউনুছ মিয়া, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলো হলো ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি), প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), ঈশা খাঁ ইউনিভার্সিটি (কিশোরগঞ্জ), কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (রাজশাহী) ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় (রাজশাহী)।

এর মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কমিটি গঠনের বিষয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। এআইইউবির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ‘বিনা অনুমতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কিংবা লোগো কোনো অনুষ্ঠান, সংগঠন বা কর্মসূচিতে ব্যবহার করা যাবে না।’ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ই-মেইল করে কর্তৃপক্ষ বলেছে, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিকভাবে একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান এবং কোনো রাজনৈতিক ক্লাব বা সংগঠনকে সমর্থন করে না।

গতকাল সোমবার পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরাও তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার কথা জানিয়েছেন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এম লুৎফর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কমিটির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এরপর আমরা এ বিষয়ে শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে বলে দিয়েছি, আমরা রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ।’

ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানান আইইউবিএটির উপাচার্য আবদুর রব মিয়া।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, কেউ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতির বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই আমাদের একটি সভা রয়েছে। সেই সভার আগে আমি কিছু বলতে পারব না।’ ছাত্ররাজনীতি এই মুহূর্তে কোনো সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন না ইউল্যাবের উপাচার্য ইমরান রহমান।

নাম গোপন রাখার শর্তে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি ছিল না, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ছিল। এখন ছাত্রলীগের কমিটি হলো, এরপর হয়তো অন্য সংগঠনেরও কমিটি হবে। নানা নেতিবাচক ঘটনায় ছাত্ররাজনীতি, বিশেষ করে ছাত্রলীগের রাজনীতি ইতিমধ্যেই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। আমরা ছাত্ররাজনীতি চাই না, নির্বিঘ্ন শিক্ষাজীবন চাই।’

উপাচার্যদের আপত্তি ও শিক্ষার্থীদের অবস্থানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতিচর্চা সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি।’