মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা থাকতে হবে

জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন অব বাংলাদেশের’ আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা। ঢাকা, ০২ সেপ্টেম্বর
ছবি: দীপু মালাকার

দেশের মানুষের ভোটাধিকার নেই। চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা না থাকায় মানুষ মতো প্রকাশ করতে পারেন না। এসব কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছেই। জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ শনিবার আয়োজিত ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার আইনি দিক’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। সেমিনারের আয়োজন করে ‘ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন অব বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা শারমিন।

প্রবন্ধে ফারজানা শারমিন বলেন, বাংলাদেশ মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এসব চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছে। এমনকি এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারের ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়ন করছে। ফলে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বাড়ছে। এর মধ্যে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং ভিন্নমত দমনে নির্যাতনের ঘটনাগুলোও উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবদুস সালাম মামুন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকারই নেই। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানুষের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা থাকতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে মানুষের চিন্তা এবং বিবেকের স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে তার ভোটাধিকার। বাংলাদেশে শুধু ‘সুবিধাভোগী’ ছাড়া সর্বজনীনভাবে বলা হচ্ছে মানুষ ভোট দিতে পারছেন না। বিবেক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।

‘আমরা হীরক রাজার দেশে বাস করছি’—এমন মন্তব্য করে আবদুস সালাম বলেন, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। পরস্পর আলোচনার মাধ্যমে সংকট থেকে উত্তরণের উপায় বের করতে হবে। এ দেশের মানুষ চিন্তার স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় জনগণের মতামতের মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারাই হবে জনগণের সরকার। জনগণের সরকার জনগণের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক আবদুল লতিফ। তিনি আয়োজক সংগঠনেরও সভাপতি। আবদুল লতিফ বলেন, ‘বাংলাদেশে একক নেতৃত্বে ব্যক্তিতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা কখনো কখনো বলি, ব্যক্তিতন্ত্র ভালো। একজন রাজা যদি মহান হন, তাঁর একক সিদ্ধান্ত বা আদেশ যদি মহান হয়, নিষ্ঠাবান হয়, ন্যায়ের প্রতীক হয়— তাহলে সেটি ভালো ব্যক্তিতন্ত্র।  কিন্তু এখন আমরা এক ব্যক্তির শাসনে এমনভাবে  নিপীড়িত, নির্যাতিত, অতিষ্ঠ যে এটাকে নিকৃষ্ট শাসন বলা যায়। বিদেশি রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলো যে বিবৃতি দিচ্ছে, তাতে এখানে একটি নিকৃষ্টতম শাসন কায়েম করার তথ্যই তুলে ধরছে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারি, সেটিই এখন খুঁজে বের করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দীন অসীম। তিনি বলেন, দেশের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ স্বাধীন বলা হলেও কার্যত দেশ পরিচালিত হচ্ছে নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে। ফলে দেশে কোনো আইনের শাসন নেই।

প্রকৌশলী জিয়া হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, সাবেক বিচারক ইকতেদার আহমেদ, আইনজীবী আকবর হোসেন, আইনজীবী পারভেজ হাসান প্রমুখ।