প্রবাসে মন টেকেনি, দেশে ফল-সবজি চাষে বছরে ৬ লাখ আয় সুশান্তের

রাঙ্গুনিয়া থেকে সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার বাগানের মাল্টা পৌঁছে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে
ছবি: প্রথম আলো

দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার। তিন শতক জমি বর্গা নিয়ে কিছু ফসল ফলাতেন তাঁর বাবা। সামান্য আয়েই চলত আট সদস্যের সংসার। তাই খাওয়াও চলত মেপে মেপে।

তবে নিজের চেষ্টায় ভাগ্য বদল করেছেন সুশান্ত। কৃষিই তাঁর জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। ফল-সবজি বিক্রি করে বছরে এখন ছয় লাখ টাকা আয় করেন কৃষি ডিপ্লোমাধারী এই তরুণ। বললেন, এখন স্বাচ্ছন্দ্যেই চলছে তাঁদের জীবন।

সুশান্তের সফলতার গল্প কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মুখেও। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সুশান্ত একজন সফল কৃষক। প্রাকৃতিক উপায়ে ফল-সবজি উৎপাদন করেন। তাঁর বাগান থেকেই পেঁপে ও মাল্টা কিনে নিয়ে যান ব্যাপারীরা।

প্রবাসে মন টেকেনি, দেশে কৃষিতেই ভাগ্য বদল

৩৮ বছরের সুশান্তের জীবনটা দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ২০০৭ সালে তিনি হাটহাজারী কৃষি ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন, এরপর চলে যান ওমানে। সেখানে একটি নার্সারিতে সহায়ক হিসেবে কাজ নেন। বেতন ছিল ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু ওমানে বেশি দিন মন টেকেনি সুশান্তর। তাই ফিরে আসেন দেশে। এরপর শুরু করেন রেড লেডি পেঁপের চাষ। শুরু হয় জীবনের নতুন এক অধ্যায়ের।

সুশান্ত বলেন, ‘ছোটবেলা অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলতে হয়েছে। একটা ভাঙাচোরা মাটির ঘর ছিল। সেখানেই সবাই থাকতাম। ডিপ্লোমা পাস করে ভাগ্য বদলের লক্ষ্যে ওমানে যাই। কিন্তু সেখানে মন বসাতে পারিনি। দেশে এসে শুরু করি পেঁপের চাষ। এরপরই দুরবস্থার অবসান হয়।’

পেঁপে চাষ দিয়ে শুরু। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যাকে
ছবি: প্রথম আলো

সুশান্তের নিজের কোনো জমি ছিল না। তাই ২০০৮ সালের দিকে পাঁচ হাজার টাকায় এক বিঘা জমি বর্গা নেন। শুরু করেন রেড লেডি পেঁপের চাষ। ৩৫ হাজার টাকা জোগাড় করে পেঁপের চারা কিনে আনেন তিনি। এক বছর গায়েগতরের খাটুনি তাঁকে সফলতা এনে দেয়।

নিজের সাফল্যের গল্প শুনিয়ে সুশান্ত বলেন, শুরুতেই বছরে দেড় লাখ টাকা আয় করেন। সেই থেকে শুরু। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ধাপে ধাপে তিনি ফসল বাড়িয়েছেন। এতে বেড়েছে আয়। ভাঙা ঘর সেমি পাকা করেছেন। জমি কিনেছেন সাড়ে ১৩ শতক, গাভি আছে ৩টি।

আরও পড়ুন

রাঙ্গুনিয়ার মাল্টা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে

সুশান্তের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রৈস্যাবিনি গ্রামে। তাঁরা চার ভাই ও এক বোন। ভাইবোনের মধ্যে সুশান্ত দ্বিতীয়। বড় ভাই সুকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা অভাবের কারণে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। দুই ভাই ওমানে আছেন। আর বোন আছেন দক্ষিণ কোরিয়ায়।

সুশান্ত জানান, বর্তমানে ১৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করছেন। পেঁপে তো আছেই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধান, মুলা ও মাল্টা। বছরে ফল-সবজি বিক্রির লেনদেন ৩০ লাখ টাকা, আয় হয় ৬ লাখ টাকা। রাঙ্গুনিয়া থেকে তাঁর বাগানের মাল্টা পৌঁছে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

বর্তমানে ১৫ বিঘা জমিতে চাষ করছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা। পেঁপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধান, মুলাও
ছবি: প্রথম আলো

সুশান্তকে কৃষিকাজে সার্বিকভাবে সাহায্য করেন তাঁর স্ত্রী রুপা তঞ্চঙ্গ্যা। কৃষিকাজ করেই একমাত্র ছেলেকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটছে এই দম্পতির।

আরও পড়ুন

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবু কাউসার মোহাম্মদ সারোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সুশান্তকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রযুক্তিগত বিষয়েও। সেসব পরামর্শ তিনি দ্রুত কাজে লাগিয়েছেন। এ কারণে তাঁর আয়ও বেড়েছে।

আরও পড়ুন