ঘরে বসে হারানো-প্রাপ্তির জিডি, অনলাইনেই জানা যায় অগ্রগতি
গত ১৬ অক্টোবর রাজধানীর মালিবাগের মৌচাক এলাকায় মুঠোফোন খোয়া যায় সিদ্ধেশ্বরী এলাকার গৃহিণী আশুরা বেগমের। এ ঘটনায় ওই দিনই তিনি রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
আশুরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জানতেন না অনলাইনে জিডি করা যায়। এ কারণে তিনি সরাসরি থানায় যান। তবে সেখানে থানার কম্পিউটারেই তিনি অনলাইনে জিডি করেন। পুলিশ সদস্যরা তাঁকে সহযোগিতা করেন।
আশুরা বেগম বলেন, ‘অনলাইনে জিডি চালু হওয়ায় এখন মানুষকে ঝামেলায় পড়তে হবে না, বাসায় বসেই করা যাবে।’
ঘরে বসেই হারানো বা প্রাপ্তির বিষয়ে জিডি করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে আবেদনকারী জিডির সর্বশেষ অবস্থাও জানতে পারছেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, জমিজমা–সংক্রান্তসহ অন্যান্য ঘটনার বিষয়ে সশরীর থানায় গিয়ে জিডি করতে হয়।
অনলাইনে জিডি চালু হওয়ায় এখন মানুষকে ঝামেলায় পড়তে হবে না, বাসায় বসেই করা যাবে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত ২১ জুন রাজারবাগ পুলিশ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনলাইন জিডি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এরপর রাজধানীসহ সারা দেশে অনলাইনে জিডি করার সুবিধা চালু হয়।
বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জেলার অধীন সব থানায় হারানো বা প্রাপ্তির বিষয়ে অনলাইনে জিডি করা হচ্ছে। তবে জমিজমাসহ কিছু বিষয়ে তদন্তের দরকার নেই, এমন ধরনের জিডি থানায় গিয়ে করতে হয়। তবে এ ধরনের জিডি করতে কেউ ফোনে অনুরোধ জানালে থানার পক্ষ থেকে তা করে দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
৯ মাসে ডিএমপির থানাগুলোয় দুই লাখ জিডি
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে ডিএমপির থানাগুলোতে অনলাইন জিডি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর অনেকগুলোতেই মিথ্যা ও ভুল তথ্য থাকত। আবার কেউ অন্যকে ফাঁসাতেও অনলাইনে জিডি করতেন। এতে বাসার সঠিক ঠিকানা, ফোন নম্বর দেওয়া হতো না।
আবেদনে অনেকের স্ক্যান করা সই থাকত না। এসব কারণে ২০১৭ সালে অনলাইন জিডির সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালে কলাবাগান, সূত্রাপুর ও ক্যান্টনমেন্ট থানায় আবার পরীক্ষামূলক অনলাইন জিডি চালু করা হয়।
২০০৯ সালে ডিএমপির থানাগুলোতে অনলাইন জিডি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর অনেকগুলোতেই মিথ্যা ও ভুল তথ্য থাকত। আবার কেউ অন্যকে ফাঁসাতেও অনলাইনে জিডি করতেন। এতে সঠিক বাসার ঠিকানা, ফোন নম্বর দেওয়া হতো না। আবেদনে অনেকের স্ক্যান করা সই থাকত না। এসব কারণে ২০১৭ সালে অনলাইন জিডির সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়।
ডিএমপি কর্মকর্তারা বলছেন, সশরীর থানায় গিয়ে জিডি করা হলে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার সুযোগ কম থাকে। কারণ, বাদীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়বস্তু সম্পর্কে পুলিশ সদস্যরা প্রাথমিক একটি ধারণা পান। একই সঙ্গে প্রাথমিক তদন্তের কাজও হয়ে যায়।
ডিএমপি সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত—এই ৯ মাসে ডিএমপির ৫০ থানায় ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৪টি অনলাইনে জিডির জন্য আবেদন করা হয়। এর মধ্যে ৪০ থানায় ২০৯টি আবেদনে তথ্যগত ভুল থাকায় সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) সেগুলো বাতিল করেন।
রমনা থানার ওসি আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধ, ফেসবুক আইডি ও চাঁদাবাজিসহ কিছু ঘটনায় জিডির তদন্ত করতে হয়। এ ছাড়াও এসব ঘটনায় কিছু জটিলতা থাকে। তাই এসব কারণে ঘটনায় ভুক্তভোগীকে থানায় এসে জিডি করতে হয়।
‘জিডির প্রক্রিয়া আরও সহজ করা উচিত’
রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমানের পাসপোর্ট হারিয়ে যায়। এ জন্য গত ৬ অক্টোবর তিনি মিরপুর থানায় অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জিডি করতে কষ্ট করে থানায় যেতে হয়নি। ঘরে বসেই অনলাইনে জিডি করা গেছে। তবে জিডির প্রক্রিয়া আরও সহজ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
জিডি করার সময় প্রথমবার অ্যাপে ঢুকতে পারেননি উল্লেখ করে মাহবুবুর রহমান বলেন, অবশ্য দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় তিনি সফল হন।
জানতে চাইলে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন প্রথম আলোকে বলেন, যেসব ক্ষেত্রে জিডি করতে ভুক্তভোগীকে থানায় আসতে হয়, সে ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে পুলিশ কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেন। পরে সেই আবেদন জিডি হিসেবে গ্রহণ করে ওসি থানার সার্ভারে তুলে (এন্ট্রি) রাখেন।
জমিজমা–সংক্রান্ত ঘটনাসহ অন্যান্য ঘটনার তদন্ত ও তথ্য যাচাইয়ের বিষয় থাকে। এ ছাড়া কিছু আইনি জটিলতাও আছে, সে জন্য আবেদনকারীকে থানায় গিয়ে জিডি করতে হয়।
যেভাবে অনলাইনে জিডি করা যায়
অনলাইনে জিডি করতে প্রথমে gd.police.gov.bd ওয়েবসাইটে ঢুকতে হবে। সেখানে অনলাইনে জিডির একটি পাতা আসবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর, মুঠোফোন নম্বর ও জন্মতারিখ লিখে সাবমিট করতে হবে। এরপর পরিচয় নিশ্চিতের জন্য খুদেবার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে একটি কোড আবেদনকারীর দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে যাবে।
দ্বিতীয় ধাপে নিজের জন্য নাকি অন্যের পক্ষে জিডি করবেন, সেটি নির্বাচন করতে হবে। জিডির ধরন ও কী হারানো গেছে বা খুঁজে পাওয়া গেছে, তা নির্বাচন করতে হবে। কোন জেলার কোন থানায় বা মহানগরের কোন থানায় জিডি করতে চান, তা নির্বাচন করতে হবে। ঘটনার সময় ও স্থান লিখে ‘পরবর্তী ধাপ’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
সর্বশেষ, অর্থাৎ তৃতীয় ধাপে আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা ও ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা লিখতে হবে। জিডি–সম্পর্কিত কোনো নথি (ডকুমেন্ট) থাকলে সেগুলো সংযুক্ত করা যাবে। ই-মেইল দিতে হবে।
এরপর ‘সাবমিট’ (জমা) বাটনে ক্লিক করলে সম্পন্ন হবে অনলাইন জিডির। আবেদন সম্পন্ন হলে লগইন করে আবেদনকারী জিডির সর্বশেষ অবস্থাও জানতে পারবেন।
হারানো বা প্রাপ্তি ছাড়া অন্যান্য ঘটনায় জিডি অনলাইনে চালু করা হবে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খ মহিদ উদ্দিনের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা–সংক্রান্ত ঘটনাসহ অন্যান্য ঘটনার তদন্ত ও তথ্য যাচাইয়ের বিষয় থাকে। এ ছাড়া কিছু আইনি জটিলতাও আছে, সে জন্য আবেদনকারীকে থানায় গিয়ে জিডি করতে হয়।