ভোটার না এলে বোঝা যাবে গণতন্ত্র অসুস্থ: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল
ফাইল ছবি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোটাররা একটু নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে হবে। তাঁরা ভোটকেন্দ্রে না এলে বোঝা যাবে গণতন্ত্রের অসুস্থতা রয়েছে, গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হচ্ছে।

আজ রোববার নির্বাচন ভবনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপে সিইসি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কী কী ক্ষমতা আছে, এগুলো আমরা দেখছি। আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, যে ক্ষমতা আমাদের আছে, তার মধ্যেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেই দায়িত্ব পালন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে ইসি। আজ চারটি দলের সঙ্গে সংলাপের সময়সূচি নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সংলাপে অংশ নেয়নি। খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ আলাদা সময়ে সংলাপে অংশ নিয়েছে।

আজ দুপুরে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে সংলাপে অংশ নেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাসদ। দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসির দায়িত্ব সংবিধান ও আইন অনুযায়ী যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে প্রস্তুত থাকা। কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়টি একান্তই সেই রাজনৈতিক দলের নিজস্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়সহ কোনো রাজনৈতিক বিতর্কেই নির্বাচন কমিশনের জড়িত হওয়া বা মতামত, বক্তব্য, মন্তব্য প্রদান করা উচিত নয়। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক বিরোধে সালিসি সংস্থা নয়।

জাসদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, নির্বাচন নিয়ে সংবিধান ও আইনবহির্ভূত এমন কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য বা প্রস্তাবকে নির্বাচন কমিশনের প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। কয়েক জন বিদেশি কূটনীতিক ইসির কাজে কূটনৈতিক শিষ্টাচারপরিপন্থী এবং অযাচিতভাবে নাক গলিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের উচিত এ ধরনের কূটনৈতিক শিষ্টাচারপরিপন্থী অযাচিত নাক গলানোকে প্রশ্রয় না দেওয়া।

জাসদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে বিদেশি কূটনীতিকেরা ইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে তাঁরা নির্বাচনের বিষয়ে কোনো পরামর্শ ইসিকে দেননি।

রাজনৈতিক বিষয়ে ইসিকে সালিসি না করার বিষয়ে জাসদের প্রস্তাবের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে বলেছি, সবাইকে আহ্বান করে যাব। কিন্তু আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছি, কাউকে নির্বাচনে আসতে আমরা বাধ‌্য করতে পারব না। এটা আমাদের দায়িত্বও নয়। আমাদের দায়িত্ব সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ‌্য নির্বাচনের জন‌্য সবাইকে আহ্বান করা।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সংবিধান ও আইনে ইসিকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, তা পর্যাপ্ত। তারপরও কোনো ফাঁকফোকর থাকলে সেটা নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন। দলগুলো আইনের প্রয়োগে সহযোগিতা না করে বিরুদ্ধাচরণ করলে ইসির জন‌্য কঠিন হয়ে যাবে।

এর আগে খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেন, সব দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে তাঁরা অনুরোধ করে যাচ্ছেন। অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল দাবি
সংলাপে অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বিলুপ্ত করা, রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বিধান বাতিল করা, নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ইসির অধীনে আনা, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা চালু করাসহ ৪০ দফা প্রস্তাব পেশ করে খেলাফত আন্দোলন।

অন্যদিকে এক দিনে জাতীয় নির্বাচন না করে তিন দিনে ভোট করাসহ ৯ দফা প্রস্তাব দেয় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ।