ইউনেসকোর ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পেলেন ড. ইউনূস

সম্মেলনের সমাপনী নৈশভোজে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়ছবি: মুহাম্মদ ইউনূসের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

একাদশ বিশ্ব বাকু ফোরামে বিশেষ বক্তা হিসেবে ভাষণ দিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্মেলনের শেষ দিন তাঁকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। সম্মেলনের সমাপনী নৈশভোজে তাঁর হাতে এই সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ইউনূস সেন্টারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুসারে, বাকু ফোরাম একটি উচ্চপর্যায়ের মর্যাদাসম্পন্ন সম্মেলন। আজারবাইজানের বাকুতে ১৪-১৬ মার্চ একাদশ বিশ্ব বাকু ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘ফিক্সিং দ্য ফ্যাকচার্ড ওয়ার্ল্ড’। সম্মেলনের আয়োজক ছিল নিজামি গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার।

সম্মেলনে বিশ্বের খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাবেক-বর্তমান প্রধান, নোবেলজয়ীসহ প্রায় ৪০০ ব্যক্তি অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস, নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী কৈলাস সত্যার্থী, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি।

সম্মেলনে দেওয়া বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রত্যেক মানুষের উদ্যোক্তাশক্তিকে বিকশিত করার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সম্পদ কেন্দ্রীকরণের বিপরীত প্রবাহ সৃষ্টি এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কমিউনিটিগুলোকে নিজ নিজ সমস্যার সমাধানে ক্ষমতায়িত করার আহ্বান জানান।

ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার পথিকৃৎ হিসেবে এই দুটি ক্ষেত্রে নিজের বিপুল অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি একটি ‘তিন শূন্য’ অর্থাৎ শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্বের পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে পৃথিবীকে পুনর্গঠিত করতে উদ্ভাবনমূলক সমাধানসহ সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের ওপর জোর দেন।

সম্মেলনকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস ও জাতিসংঘের অন্যতম আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উইনি বিয়ানইমার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে তাঁরা মহামারি-পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবাসহ মাঠপর্যায়ের অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা করেন।

বাকুতে অবস্থানকালে আজারবাইজানের প্রধানমন্ত্রী আলী আসাদভের আমন্ত্রণে তাঁর সঙ্গে এক বিশেষ বৈঠকে মিলিত হন ড. ইউনূস। বৈঠকে আলী আসাদভ আজারবাইজানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ড. ইউনূসের বিভিন্ন কর্মসূচির ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।

ড. ইউনূস আজারবাইজান স্টেট ইকোনমিক ইউনিভার্সিটিতে ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টারের নয়নাভিরাম কার্যালয় উদ্বোধন করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে সামাজিক ব্যবসা কোর্স চালু করেছে। সামাজিক ব্যবসার ওপর বিভিন্ন কর্মশালা পরিচালনা করছে। ড. ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের সঙ্গে এক মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

উল্লেখ্য, ১০ বছর আগে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইউনেসকোর ‘পিস ট্রি’ পুরস্কার পেয়েছিলেন। নারী ও কন্যাশিশুদের শিক্ষা প্রসারের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।