গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ওয়ার্ল্ড ডেমোক্রেসি কংগ্রেস’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘ওয়ার্ল্ড ডেমোক্রেসি কংগ্রেস’ছবি: প্রথম আলো।

বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অভিযাত্রা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘ওয়ার্ল্ড ডেমোক্রেসি কংগ্রেস’ শুরু হয়েছে। পলিটিক্যাল অ্যান্ড পলিসি সায়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশন (পিপিএসআরএফ) আয়োজিত এই সম্মেলন সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে শুরু হয়।

সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মেলনের আহ্বায়ক ও পিপিএসআরএফের চেয়ারম্যান কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম বক্তব্য দেন।

স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, গণতন্ত্র কেবল একটি রাজনৈতিক কাঠামো নয়। এটি প্রতিষ্ঠান, অধিকার ও নাগরিক অংশগ্রহণের সমন্বিত চর্চা। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ট্রানজিশন ও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে এ সম্মেলন সময়োপযোগী।

মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, দেশি-বিদেশি গবেষক ও স্কলারদের আলোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা এবং সহনশীল সমাজ গঠনের পথনির্দেশ উঠে আসবে। এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে।

উদ্বোধকের বক্তব্যে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্য দেশগুলো যখন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে সুসংহত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিশনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, এমন এক সময়ে ওয়ার্ল্ড ডেমোক্রেসি কংগ্রেস, ২০২৫-এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারা তাঁর জন্য সম্মানের বিষয়।

রেফাত আহমেদ বলেন, এই কংগ্রেসের মূল প্রতিপাদ্য ‘ট্রানজিশনাল গণতন্ত্রে টেকসই রাজনৈতিক উন্নয়ন’ আমাদের জাতীয় অভিজ্ঞতার সঙ্গে গভীরভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাগুলো ক্রমেই প্রাতিষ্ঠানিক, সাংবিধানিক ও শাসনব্যবস্থাগত সংস্কারের মাধ্যমে বাস্তব রূপ পাচ্ছে।

আয়োজকদের অভিনন্দন জানিয়ে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই কংগ্রেসের আলোচনা বাংলাদেশে চলমান জাতীয় সংস্কারপ্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করবে এবং বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, গণতন্ত্র কোনো চূড়ান্ত গন্তব্য নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই যাত্রায় অনিশ্চয়তা অনিবার্য, তবে ধৈর্য ও সহনশীলতার মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রকে টেকসই করা সম্ভব।

নিয়াজ আহমদ খান আরও বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় ‘রূপান্তর’ বলতে মূলত রাজনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে মোকাবিলা করাকে বোঝায়, যার কোনো সহজ বা তাৎক্ষণিক সমাধান নেই। নির্বাচন, সংস্কারের স্থায়িত্ব, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে বহুমাত্রিক ও আন্তবিষয়ক আলোচনার বিকল্প নেই।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, গণ–অভ্যুত্থান থেকে সাংবিধানিক অভিযাত্রা পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাস গণতন্ত্রের সংগ্রামের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। বাংলাদেশে গণতন্ত্র কখনোই উপহার হিসেবে আসেনি, এটি ত্যাগ ও আত্মদানের মধ্য দিয়েই অর্জিত হয়েছে।

অধ্যাপক রেজাউল করিম আরও বলেন, গণতন্ত্র কোনো একবারের অর্জন নয়। একে ধারাবাহিকভাবে লালন করতে হয়, সুরক্ষিত রাখতে হয় এবং নিয়মিতভাবে নবায়ন করতে হয়।

দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন মঙ্গলবার একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। সমাপনী অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেবেন সদ্য সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এবং ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন।