জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে উন্নয়নের পরিকল্পনা করতে হবে

ব্র্যাক আয়োজিত তিন দিনব্যাপী হোপ ফেস্টিভ্যালের সমাপনী অধিবেশনে ‘সাসটেইনেবিলিটি: ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডাপটেশন’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অতিথিরা
ছবি: সংগৃহীত

শিল্পোন্নত ও ধনী দেশগুলো যেভাবে উন্নয়ন করেছে, তার ফল হিসেবে আজ বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও উদ্যোগগুলো নিতে হবে।

ব্র্যাক আয়োজিত তিন দিনব্যাপী হোপ ফেস্টিভ্যালের সমাপনী অধিবেশনের প্যানেল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন। আজ শনিবার রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই আলোচনার মূল বিষয় ছিল ‘সাসটেইনেবিলিটি: ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডাপটেশন’।

আলোচনায় বক্তারা দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মতো প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পরিবেশবান্ধব বাড়ির নকশা তৈরি এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে কৃষি ও শিল্পে জলবায়ুবান্ধব এবং পরিবেশ সুরক্ষা করবে এমন উদ্ভাবনে এগিয়ে আসতে তরুণদের আহ্বান জানান।

আলোচনায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা ম্যালেরিয়া নির্মূলের আলোচনা যদি মশার সঙ্গে বসে করি, তাহলে সেই সমস্যার সমাধান হবে না। ফলে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে কোনো সমাধানে পৌঁছানো যাবে না। শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোকে ভুক্তভোগী দেশগুলোকে সহায়তার দায় নিতে হবে। একই সঙ্গে শুধু ওই অর্থের জন্য বসে না থেকে নিজেদের মেধা, শক্তি ও সংগঠনকে একত্র করতে হবে।’

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বরাজনীতির হিসাব-নিকাশ খেয়াল রাখার পাশাপাশি নিজেদের উদ্ভাবনগুলোকে সামনে আনতে হবে। জলবায়ু সহিষ্ণু বাড়ি ও প্রযুক্তিগুলোকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে।

বক্তব্যে বাগেরহাটের বানিয়াশান্তার কৃষিজমি সুরক্ষায় স্থানীয় ব্যক্তিদের আন্দোলনের সফলতার উদাহরণ টেনে আসিফ সালেহ বলেন, স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁদের কৃষিজমি সুরক্ষার জন্য গড়ে তোলা আন্দোলনকে দেশের নাগরিক সমাজের কাছে নিয়ে যেতে পেরেছেন। ভূমি অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারও ওই তিন ফসলি জমি রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে।

ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক লিয়াকত আলী দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সহনশীল বাড়ি এবং পানি সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘ব্র্যাক থেকে আমরা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে এ ধরনের বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা ব্যবহারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের এ ধরনের আরও সমাধানের পথ বের করতে হবে।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারম্যান জয়নাব ফারুকী আলী বলেন, ‘বিশ্বের মোট জ্বালানি শক্তির বড় অংশ ব্যয় হয় ভবন নির্মাণসামগ্রী উৎপাদন, পরিবহন এবং বসতিগুলোকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য। ফলে আমরা যদি এই খাতে পরিবেশবান্ধব এবং কম জ্বালানি ব্যয় হয় এমন সামগ্রী উৎপাদনে জোর দিই, তাহলে অনেক সমস্যার আশু সমাধান সম্ভব।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খন্দকার হাসিবুল কবির বলেন, ‘ঐতিহ্যগতভাবে দেশের মানুষ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী মাটি, বাঁশ, ছনসহ নানা ধরনের পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করত। কিন্তু ধীরে ধীরে সামাজিক নানা কারণে তারা টিনের ঘর নির্মাণে ঝুঁকে গেল। এ ধরনের বাড়ি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং মাটির ঘরের চেয়ে চার ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা ধারণ করে। তাই আমাদের পরিবেশবান্ধব ও স্বল্প ব্যয়ে নির্মাণ সম্ভব এমন বাড়ির দিকে যেতে হবে।’

প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ইফতেখার মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন ডেভেলপমেন্টের নকশা বিভাগের দলনেতা এমারাল্ড উপমা বৈদ্য ও জলবায়ু অধিকার নিয়ে কাজ করা তরুণ কর্মী ইমরান হোসেন।