সাক্ষাৎকার
ইন্টারনেট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্যাণে বাড়ছে স্মার্ট রেফ্রিজারেটরের চাহিদা
বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে ‘স্মার্ট’ পণ্যের গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্মার্টফোন বা স্মার্ট টিভির পাশাপাশি এখন ঘরে জায়গা করে নিচ্ছে স্মার্ট রেফ্রিজারেটরও। শুধু খাবার সংরক্ষণ নয়, বরং স্বাস্থ্য, সময় বাঁচানো, বিদ্যুৎ সাশ্রয় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে স্মার্ট রেফ্রিজারেটর দিচ্ছে অভিনব সব সমাধান। অনেকেই বলছেন, ব্যস্ত জীবনের সহজ সমাধান হলো স্মার্ট রেফ্রিজারেটর। এই স্মার্ট রেফ্রিজারেটরের কার্যকারিতা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং নতুন উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিয়ে প্রথম আলো ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের চিফ বিজনেস অফিসার মো. তাহসিনুল হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দিনার হোসাইন হিমু।
স্মার্ট রেফ্রিজারেটর বলতে কী বোঝায়?
তাহসিনুল হক: স্মার্ট রেফ্রিজারেটর এমন একটি আধুনিক রেফ্রিজারেটর, যা ইন্টারনেট, সেন্সর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। এটি শুধু খাবার সংরক্ষণই নয়, বরং ব্যবহারের অভ্যাস বিশ্লেষণ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের সুবিধা দেয়।
দৈনন্দিন জীবনে কী ধরনের সুবিধা দেয় স্মার্ট রেফ্রিজারেটর?
তাহসিনুল হক: স্মার্ট রেফ্রিজারেটর ব্যবহারে যেমন সময় ও শ্রম বাঁচে, তেমনি খাবার দীর্ঘ সময় সতেজ থাকে। ফ্রিজের দরজা এক মিনিটের বেশি খোলা থাকলে সতর্কবার্তা আসে। বাইরে থেকেও ফ্রিজের কার্যক্রম মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যা কর্মজীবী মানুষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
সাধারণ রেফ্রিজারেটরের চেয়ে স্মার্ট রেফ্রিজারেটরের বিশেষত্ব কী?
তাহসিনুল হক: সাধারণ রেফ্রিজারেটরের তুলনায় স্মার্ট রেফ্রিজারেটরে অনেকগুলো বিশেষ ফিচার রয়েছে। যেমন স্মার্ট রেফ্রিজারেটরে রয়েছে আইওটি ও অ্যাপ কন্ট্রোল, এআই-বেজড তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে ও ইন্টারনেট ব্রাউজিং, এআই ডক্টর, ক্লাউড মনিটরিং ও দরজা খোলা থাকলে অ্যালার্ট সিস্টেমের মতো আধুনিক সব ফিচার। এমনকি স্মার্ট রেফ্রিজারেটরে দিনে কতবার দরজা খোলা হয়েছে, সেটিও জানা যায়।
বিদ্যুৎ খরচ কতটা সাশ্রয় হয়?
তাহসিনুল হক: স্মার্ট রেফ্রিজারেটরের অন্যতম বড় সুবিধা হলো বিদ্যুৎ সাশ্রয়। উন্নত ইনভার্টার প্রযুক্তি ও সেন্সর-নির্ভর কুলিং সিস্টেমের কারণে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ অপচয় কমে আসে।
স্বাস্থ্য সচেতনতার দিক থেকে এর গুরুত্ব কতটা?
তাহসিনুল হক: স্মার্ট রেফ্রিজারেটরে খাবারের ধরন অনুযায়ী সংরক্ষণের আলাদা কম্পার্টমেন্ট ও উপযুক্ত তাপমাত্রা নিশ্চিত করে। যেমন ওয়ালটনের ‘সিন্থোফ্রেশ’ প্রযুক্তি খাবারের গুণগত মান দীর্ঘদিন অটুট রাখে, যা স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোন ধরনের গ্রাহকদের মধ্যে এর চাহিদা বেশি?
তাহসিনুল হক: সব ধরনের মানুষই এখন স্মার্ট রেফ্রিজারেটরের দিকে ঝুঁকছে। তবে প্রযুক্তি সচেতন, কর্মজীবী এবং স্মার্ট হোম ব্যবহারে আগ্রহী পরিবারগুলোর মধ্যে স্মার্ট রেফ্রিজারেটরের চাহিদা বেশি। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতন তরুণদের কাছেও স্মার্ট রেফ্রিজারেটর জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এই প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ বা সীমাবদ্ধতা কী?
তাহসিনুল হক: যাঁরা প্রযুক্তিতে নতুন, তাঁদের জন্য শুরুতে কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। পাশাপাশি ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলে কিছু ফিচার ব্যবহার করা যায় না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, সময়ের সঙ্গে এসব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা সম্ভব।
বাংলাদেশের বাজারে স্মার্ট রেফ্রিজারেটরের প্রবৃদ্ধি কেমন?
তাহসিনুল হক: স্মার্ট হোম ডিভাইসের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে স্মার্ট রেফ্রিজারেটরের বাজারও দ্রুত বাড়ছে। ওয়ালটনের মতো দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি দিয়ে এই বাজারকে আরও বিস্তৃত করছে।
ভবিষ্যতের উদ্ভাবন নিয়ে কী পরিকল্পনা রয়েছে?
তাহসিনুল হক: ভবিষ্যতে উন্নত এআইনির্ভর ফুড ম্যানেজমেন্ট, ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্টিগ্রেশন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারের দিকে যাবে স্মার্ট রেফ্রিজারেটরের প্রযুক্তি। এতে পণ্যগুলো আরও পরিবেশবান্ধব ও গ্রাহকবান্ধব হয়ে উঠবে বলেই আমরা ধারণা করছি।
রেফ্রিজারেটর মেলা নিয়ে পাঠকদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?
তাহসিনুল হক: ওয়ালটনের পক্ষ থেকে প্রথম আলো ডটকমকে ধন্যবাদ জানাই এমন উদ্যোগের জন্য। স্মার্ট রেফ্রিজারেটরসহ আমাদের সব উদ্ভাবনী পণ্যের বিষয়ে জানাতে আমরা সব সময় প্রস্তুত। আমরা আশা করি, দেশের মানুষ ঘরে বসেই আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারবেন।
প্রথম আলো: ধন্যবাদ আপনাকে।
তাহসিনুল হক: আপনাকেও ধন্যবাদ।