বানর যখন বিমান চালায় তখন আসলে কী ঘটে

শিশু-কিশোরদের ম্যাগাজিন কিশোর আলো (কিআ) আয়োজিত ‘আনন্দ ঘণ্টা’ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস। আজ সকালে চট্টগ্রামের ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের মিলনায়তনে।ছবি : সৌরভ দাশ

লন্ডনের এক অফিসের বস তাঁর কর্মচারীকে বলছেন, ‘কী মিয়া? আপনি নাকি রোজ দেরি করে অফিসে আসেন? কর্মচারী রাখঢাক না রেখেই বললেন, স্যার আপনি কি শুধু আমার আসাটা দেখবেন? যাওয়াটা দেখবেন না? আমি রোজ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বাসায় চলে যাই।’ কিশোর আলো সম্পাদক আনিসুল হক শুরুটা করলেন লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর একটা কৌতুক দিয়ে। দেরি করা নিয়ে কৌতুকটা বলতেই হাসির রোল ওঠে চট্টগ্রামের ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের মিলনায়তনে।

শুধু কৌতুক নয়, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক আজ সোমবার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক শ শিক্ষার্থীকে গল্প শোনান, পরামর্শ দেন। মজার মজার নানা প্রশ্ন ছুড়ে দেন। দেশে শিশু-কিশোরদের সবচেয়ে প্রিয় ম্যাগাজিন কিশোর আলো বা কিআ ‘আনন্দ ঘণ্টা’ নামের এ আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল ডেন কেক।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কিআ সম্পাদক কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক। আজ সকালে চট্টগ্রামের ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের মিলনায়তনে
সৌরভ দাশ

কিআ সম্পাদক আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের গল্প শোনান। বলেন, একটা উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। সব যাত্রী, বিমানসেবক, চালক মারা গেছেন। শুধু একটা বানর বেঁচে আছে। বানরকে জিজ্ঞেস করা হলো, বিমানে যাত্রী, সেবক, চালক কী করছিলেন। বানর ইশারায় বোঝাচ্ছে, ঘুমাচ্ছিলেন সবাই। তখন বানরকে আবার প্রশ্ন করা হলো, তুমি কী করছিলে? বানর বোঝাল, সে বিমান চালাচ্ছিল। এ গল্পের মূলভাবও শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বলেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘বিমান যোগ্য ও প্রশিক্ষিত লোকে না চালালে, সেটি চলবে না। দুর্ঘটনা ঘটবে। তেমনই দেশও চালাবে যোগ্য লোকেরা। ৩০ বছর পর তোমরাই দেশ চালাবে। তাই তোমাদের যোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে হবে।’

যোগ্য হতে হলে কী করতে হবে, তার পরামর্শ দেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, শুধু পাঠ্যপুস্তক পড়লে হবে না। পাশাপাশি গল্প ও উপন্যাস পড়তে হবে। সংগীতচর্চা করতে হবে। ছবি আঁকতে হবে। বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে হবে। কিংবদন্তি প্রকৌশলী এফ আর খানও এমনটি বলে গেছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেন কিআ সম্পাদক।

কিআ সম্পাদকের কাছ থেকে অটোগ্রাফ সংগ্রহ করছে শিশুরা
সৌরভ দাশ

আনিসুল হক একটি প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘প্লেটো সক্রেটিসকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, সবচেয়ে বড় দেশপ্রেম কী। উত্তরে সক্রেটিস বলেছিলেন, সবচেয়ে সুন্দরভাবে নিজের কাজ করা। ফলে তোমাদেরও নিজের কাজ ঠিকঠাকভাবে করতে হবে। প্রচুর বই পড়তে হবে। খেলাধুলা করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘একসময় দেশে শিশু-কিশোরদের জন্য ভালো মানের কোনো ম্যাগাজিন ছিল না। ছবি, গ্রাফিকস দিয়ে সাজানো ম্যাগাজিন ছিল না। আমরা অন্য দেশের ম্যাগাজিন পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। এখন তোমরা কিশোর আলো পড়তে পারছ। এটি বেশ আনন্দের। কিআতে গল্প, উপন্যাসসহ মজার মজার লেখা থাকে। ফলে কিআ তোমার ভাবনার জগৎ আরও উন্মুক্ত করে দেবে।’

গান করছে শিল্পী নুসরাত জাহান
সৌরভ দাশ

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কিশোর আলো ইস্পাহানিকে বেছে নিয়েছে, এটি অত্যন্ত আনন্দের। শিক্ষার্থীরা বরেণ্য লেখক আনিসুল হকের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছে। অনেক কিছু জানতে পারছে।’

অনুষ্ঠানে কথামালা শেষে ছিল জাদু ও সংগীত পরিবেশনা। শিক্ষার্থীদের সামনে জাদু উপস্থাপন করেন জাদুকর ফয়সাল হাওলাদার। আর গান শোনান শিল্পী নুসরাত জাহান। উপস্থাপনায় ছিলেন নাজিফা তাজনূর। এসব পরিবেশনার ফাঁকে শিক্ষার্থীরা অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য আনিসুল হককে ঘিরে ধরেছিল।