সরকার ব্যস্ত ক্ষমতা নিয়ে, ডেঙ্গু তাদের মাথায় নেই

ডেঙ্গুতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুজনের প্রতীকী অনশনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

সরকার নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা নিয়ে ব্যস্ত। ডেঙ্গু, জনগণের সমস্যা তাদের মাথাতেই নেই। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শত শত মানুষ মারা গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। দেশের মানুষের মৃত্যুতেও সরকারকে সংবেদনশীল হতে দেখা যায়নি। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।

ডেঙ্গুতে ব্যাপক প্রাণহানি সত্ত্বেও সরকারের ‘নির্বিকার’ ভূমিকার প্রতিবাদে আজ সোমবার সকাল আটটা থেকে প্রতীকী অনশনে বসেন সাবেক ছাত্র নেতা আবদুল্লাহ আল ক্বাফী ও রাগীব আহসান মুন্না। পরে সন্ধ্যায় তাঁদের প্রতীকী অনশন ভাঙান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

বেলা ১১টার দিকে অনশন কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে সংহতি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, এই অনশন কেবলই দুজনের নয়, এটা সারা দেশের মানুষের পক্ষে একটা প্রতিবাদ। সরকার দেশের মানুষের সম্মতি ছাড়াই ক্ষমতাসীন হয়েছে। তাই জনগণের জীবন রক্ষায় তাদের কোনো দায়বোধ নেই। এই মুহূর্তে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম না হলে সরকারের কোনো দায়িত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যাবে না।

বিকেলে কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় মানুষ আতঙ্কে আছে। কারণ, চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই। ডেঙ্গু হলে কোথায় যাব, এই ভেবে মানুষ দিশাহারা হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বলা হয়েছিল, ভাতে মারব, পানিতে মারব। সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আমরা হটিয়ে দিয়েছি। কিন্তু দেশের মানুষ এখন ভাতে মরছে, ডেঙ্গুতে, ওষুধের দামে মরছে। ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ছে। সরকার এখন ভাতে মারব, ভোটে মারব, ওষুধে মারব, ডাবে মারব, কাঁচা মরিচে মারব, ডিমের দামে মারব বলে চতুর্দিক থেকে হামলা চালাচ্ছে।’

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আশ্চর্যের বিষয়, যখন লুণ্ঠন, সম্পদ পাচার, দেশবিরোধী চুক্তির প্রতিবাদ হয়, তখন শুধু বোঝা যায় এ দেশে সরকার আছে। পুলিশ-ছাত্রলীগ হামলা করে, নানা মামলা হয়রানি হয়। কিন্তু মানুষ যখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, তখন দেশে সরকার আছে বলে মনে হয় না।

ডেঙ্গুতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দুজনের প্রতীকী অনশনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির দুই মেয়রের সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, উত্তর সিটিতে নতুন ওষুধ সিঙ্গাপুর থেকে এনে ঢাকঢোল পেটানোর পরে জানা গেল এটা সিঙ্গাপুরের ওষুধ না। কিন্তু এর জন্য সিটি করপোরেশনের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর দক্ষিণ সিটির যিনি মেয়র, তাঁকে তো চেয়ার থেকে ওঠানোই যায় না। তিনি ব্যস্ত বিভিন্ন জায়গা ইজারা নিয়ে। বাহাদুর শাহ পার্কের মতো ঐতিহ্যবাহী পার্কের জায়গাও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিয়েছেন এই মেয়র।

অনশনকারীদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল ক্বাফী বলেন, ‘মিরপুরের ইব্রাহিম ও রাবেয়া দম্পতির রউফ ও রাইদা নামের দুই সন্তান সাত দিনের ব্যবধানে ডেঙ্গুতে মারা গেছে। এই পরিবারের পাশে না প্রধানমন্ত্রী, না স্বাস্থ্যমন্ত্রী, না মেয়র—কেউ নেই। অথচ প্রধানমন্ত্রী যাঁকে কয়েক দিন আগেও সাম্রাজ্যবাদের দোসর বলেছেন, সেই জো বাইডেনের সঙ্গে সেলফি তুলে গদগদ হচ্ছেন। কিন্তু তিনি ডেঙ্গুতে দুই সন্তান হারানো ইব্রাহিম-রাবেয়ার কাছে যাননি।’

রাগীব আহসান মুন্না বলেন, সারা দেশের বিচলিত, মর্মাহত জনগণের কথাই তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। দুই দিন আগেও যে টগবগে শিশুরা মায়ের সামনে খেলা করেছে, বাবার আদরে বড় হয়েছে, ঘাতক ডেঙ্গু তাদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তারাই আজকে প্রতিবাদের পোস্টার হয়ে তাঁদের সঙ্গে রয়েছে।

সকালের দিকে প্রতীকী ওই অনশন কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করতে যান কথাসাহিত্যিক বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুজ্জামান হীরা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হারুন উর রশীদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী আইনুননাহার লিপি, শ্রমিকনেতা সাদেকুর রহমান শামীম, শিশু-কিশোর সংগঠক তাহমিনা সুলতানা প্রমুখ।

আর বিকেলে সংহতি জানান বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দীসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।