সেই ফরহাদ খালাস পেলেন, প্রকৃত আসামিকে খুঁজে বের করার নির্দেশ

খালাস পাওয়ার পর ফরহাদ
ছবি: সংগৃহীত

মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া পঞ্চগড়ের ফরহাদকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম আজ বৃহস্পতিবার এই রায় দেন। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফরহাদের আইনজীবী ফয়সাল আহমেদ।

খালাসের রায়ের পর ফরহাদ প্রথম আলোকে বলেন, কোনো অপরাধ না করেও চারটি বছর তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। আদালতের রায়ে আজ তিনি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন। আদালতের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পেয়েছেন তিনি। আজ তিনি খুশি।

ফরহাদের আইনজীবী ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চগড়ের ফরহাদ পেশায় মাটিকাটা শ্রমিক। তাঁর বিরুদ্ধে কখনো কোনো মামলা-মোকদ্দমা ছিল না। ২০২১ সালে হঠাৎ পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তখন ফরহাদকে বলা হয়েছিল, ঢাকার শাহজাহানপুর থানার মাদক মামলায় তাঁর নামে সাজার পরোয়ানা আছে। ১৪ দিন জেল খাটার পর ফরহাদ জামিনে মুক্তি পান। পরে তিনি সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করেন। আজ তাঁকে মামলা থেকে খালাস দিয়ে রায় দিলেন আদালত।

আইনজীবী ফয়সাল আহমেদ আরও বলেন, এই মামলার প্রকৃত আসামিকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ফরহাদ প্রথম আলোকে বলেন, যে ব্যক্তি তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে তাঁকে বিপদে ফেলেছেন, যাঁর কারণে তিনি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন, তাঁকে খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।

আরও পড়ুন

মামলার নথিপত্র, পুলিশ ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ রাজধানীর শাহজাহানপুর থেকে ৩০ গ্রাম গাঁজাসহ গ্রেপ্তার হন এক যুবক। তিনি পুলিশের কাছে নিজের নাম বলেছিলেন ফরহাদ (২৭)। বাবার নাম জয়নাল হক। বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার প্রধানপাড়া গ্রাম। পরদিন তাঁকে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর তিনি আর আদালতে হাজির হননি।

মামলা দায়েরের দুই বছর পর ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আসামিকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। আসামি পলাতক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

পরোয়ানা পেয়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে পঞ্চগড় থেকে ফরহাদ নামের যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন এই যুবক পুলিশের কাছে বলেছিলেন, তিনি সেই ফরহাদ নন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি তাঁর নামে হওয়া সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন।

আপিলকারী ফরহাদের দাবির সত্যতা যাচাইয়ে আদালত প্রথম গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির ছবি ও স্বাক্ষরসংবলিত নিবন্ধন খাতা হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ তা আদালতে জমা দেন। এ ছাড়া প্রথম গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির স্বাক্ষর ও আপিলকারীর স্বাক্ষর এক কি না, তা যাচাইয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন আদালত। সিআইডির যাচাইয়ে দুজনের স্বাক্ষরের মিল পাওয়া যায়নি। আপিলকারী ফরহাদের আপিল আবেদনের ওপর আজ রায় হলো।