এক দিনে ৯ মামলার রায়, সাজা ১২১ নেতা–কর্মীর

আদালতপ্রতীকী ছবি

বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও নয়টি মামলার রায় হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকার আদালতে এসব মামলায় ১২১ জনের সাজা হয়েছে।

সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন (আলাল), যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম (নিরব) ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া (জুয়েল) অন্যতম।

এ নিয়ে গত পাঁচ মাসে ঢাকার বিভিন্ন আদালতে অন্তত ১১২টি মামলায় ১ হাজার ৭৩৫ জনের সাজা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্তদের বেশির ভাগ বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী। কোনো কোনো মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীও রয়েছে।

গতকাল যে নয়টি মামলায় সাজা হয়েছে, সেগুলো দায়ের করা হয়েছিল ২০১০, ২০১২, ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে বেআইনি সমাবেশ, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও হামলা, যানবাহন ভাঙচুর, আগুন দেওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। সাজা হওয়া নয়টি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যেসব সাক্ষী আদালতে হাজির করা হয়েছে, এর বেশির ভাগ পুলিশের সদস্য।

এর মধ্যে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনসহ (আলাল) আটজনের তিন বছর করে সাজা হয়েছে ধানমন্ডি থানার মামলায়। ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর সকালে সাতমসজিদ রোডে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলাটি করা হয়েছিল। পুলিশ ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করে। এ মামলায় সাক্ষী করা হয় ১৭ জনকে। তাঁদের মধ্যে পুলিশের ৬ সদস্য আদালতে সাক্ষ্য দেন।

গতকাল মামলাটির রায় দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম। রায়ে সৈয়দ মোয়াজ্জেমসহ আটজনের তিন বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত বাকিরা হলেন বিএনপির সাইফুল আলম, আবদুল কাদের ভূঁইয়া, ওবায়দুল হক, হারুন অর রশীদ, শহিদুল হক ও ইব্রাহীম এবং জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম (মাসুদ)।

সৈয়দ মোয়াজ্জেমের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মক্কেল ন্যায়বিচার পাননি।

পল্টন থানার একটি মামলায় ২৬ জনকে ৯ মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন।

২০১২ সালে করা ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে দলটির নেতা-কর্মীরা পুলিশের কাজে বাধা দেন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় তাঁরা তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। পুলিশ ২০১৩ সালের ১৯ অক্টোবর মামলাটির অভিযোগপত্র জমা দেয় আদালতে। মামলায় ৩৯ জন সাক্ষীর মধ্যে পুলিশের ৫ সদস্য আদালতে সাক্ষ্য দেন।

কামরাঙ্গীরচর থানার একটি মামলার রায়ে ১২ জনকে সাড়ে চার বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী। এ মামলায় পাঁচজন খালাস পেয়েছেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে কামরাঙ্গীরচরের কুড়াঘাট হাসপাতালের সামনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিল করেন ৪৩ জন নেতা-কর্মী। পরে তাঁরা গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।

এ মামলায় পুলিশ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে পুলিশের ৪ সদস্য আদালতে সাক্ষ্য দেন।

২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে খিলক্ষেত থানায় পুলিশের করা একটি মামলার রায় দিয়েছেন সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. মইনুল ইসলাম। রায়ে বিএনপির ১০ নেতা-কর্মীর দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

একই আদালত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় নয়জনকে দুই বছর করে সাজা দিয়েছেন।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে কোতোয়ালি থানায় পুলিশের করা আরেকটি মামলার রায় দেন সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আলী হায়দার। এতে ১১ জনের তিন বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

২০১০ সালের জুনে হাজারীবাগ থানায় পুলিশের করা একটি মামলার রায়ে ২২ জনের দুই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলাটির রায় দেন সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান। পুলিশের কাজে বাধা ও যান চলাচলে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলাটি করা হয়।

২০১৭ সালের মে মাসে শাহজাহানপুর থানায় করা একটি মামলায় ৫ জনের কারাদণ্ড দিয়েছেন সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট জাকি-আল-ফারাবী। এ মামলায় খালাস পেয়েছেন ১২ জন।

এ ছাড়া ২০১২ সালের জুলাইয়ে মতিঝিল থানায় করা একটি মামলায় ১৮ জনের দুই বছর করে কারাদণ্ড দেন সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা ইসলাম।