জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা নেওয়া কমেছে ২৪ শতাংশ

সেবা নেওয়ার হারের এ নিম্নগতির পটভূমিতে আজ ২৬ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে বিশ্ব জন্মনিরোধ দিবস।

সারা দেশে সরকারি জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা নেওয়ার হার কমছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে সাত ধরনের সেবা নেওয়ার হার কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। আর ছয় বছরের হিসাব করলে এসব সেবা নেওয়ার হার কমে দাঁড়ায় প্রায় ৩৭ শতাংশ। সেবাগুলো হলো খাওয়ার বড়ি, কনডম, দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতির ইনজেকশন, ইন্ট্রা–ইউটেরিন ডিভাইস (আইডি) বা কপার টি, ইমপ্ল্যান্ট, স্থায়ী পদ্ধতি ও জরুরি বড়ি।

করোনা সংক্রমণের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা নেওয়ার হার আরও কমে যায়। আর এ পর্যন্ত তা করোনাকালের আগের অবস্থায় ফিরে যায়নি। তবে গত ছয় বছরে জরুরি বড়ি নেওয়ার হার ব্যাপকহারে বেড়েছে। অপরিকল্পিত যৌনমিলনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই বড়ি খেতে হয়। সরকারিভাবে ২০১৬–২০১৭ অর্থবছরে শুধু ঢাকায় জরুরি বড়ি দেওয়া শুরু হয়। সে সময় ১৫২টি বড়ি সরবরাহ করা হয়েছিল। ২০২১–২২ অর্থবছরে সারা দেশে জরুরি বড়ি সরবরাহ করা হয় পৌনে চার লাখের বেশি।

সরকারি জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা নেওয়ার হারের এই নিম্নগতির পটভূমিতে আজ ২৬ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে বিশ্ব জন্মনিরোধ দিবস।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের জন্মনিরোধ সেবা ও সরবরাহ কর্মসূচি (সিসিএসডিপি) ইউনিটের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির ক্ষেত্রে যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো। মোট প্রজনন হার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে মা ও শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত করে সেবার মান বাড়ানো হয়েছে।

বেশি কমেছে খাওয়ার বড়ি

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর অর্থবছর ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা দেওয়ার হিসাব করে। অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১৭–১৮ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১–২২ অর্থবছরে অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে খাওয়ার বড়ি নেওয়ার হার ৩৭ শতাংশ কমেছে। এ সময়ে স্থায়ী পদ্ধতি নেওয়ার হার কমেছে ৩৩ শতাংশ। এ ছাড়া কপার টি প্রায় ২৯ শতাংশ, ইমপ্ল্যান্ট প্রায় ১৯ শতাংশ, ইনজেকশন ১৭ শতাংশ ও কনডম নেওয়ার হার কমেছে ১৪ শতাংশ। অবশ্য ইমপ্ল্যান্ট সেবা নেওয়ার হার ধারাবাহিকভাবে কমেনি; এর হারে ওঠা–নামা আছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করলে সেবা নেওয়ার হারের পার্থক্য আরও বাড়ে। ওই অর্থবছরের তুলনায় ২০২১–২২ অর্থবছরে খাওয়ার বড়ি ৪৩ শতাংশ, কনডম ৩৪ শতাংশ, ইনজেকশন ২৭ শতাংশ, কপার টি ৩৭ শতাংশ ও স্থায়ী পদ্ধতি প্রায় ৩৬ শতাংশ কমেছে। শুধু ইমপ্ল্যান্টের পার্থক্য কম, ৯ শতাংশ।

অবশ্য খাওয়ার বড়ি ও কনডম সেবা কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন নন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এ দুটি সেবা সরকারি পর্যায়ের চেয়ে বেসরকারি পর্যায় অর্থাৎ ওষুধের দোকান থেকে বেশি নেওয়া হয়। জরুরি বড়ির ক্ষেত্রেও তাই। তবে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী পদ্ধতির সেবার প্রায় পুরোটাই সরকারি পর্যায় থেকে নেওয়া হয়। এতে এ সেবা দুটি নেওয়ার হার কমে যাওয়াকে উদ্বেগজনক মনে করা হচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতালে গত বুধবার সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত দুজন নারী দীর্ঘমেয়াদি ১০ বছরের জন্য কপার টি, তিনজন নারী ইমপ্ল্যান্ট সেবা নেন। অন্যদিকে দুজন পুরুষ স্থায়ী পদ্ধতি নো স্ক্যালপল ভেসেকটমি (এনএসভি) নেন।

হাসপাতালের পরিচালক মো. মুনীরুজ্জামান সিদ্দীকী প্রথম আলোকে বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম চিকিৎসকনির্ভর হওয়া উচিত। এতে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী পদ্ধতি নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের আস্থা বাড়বে। তিনি বলেন, ৩৯১ জন চিকিৎসক নিয়োগের অপেক্ষায়। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে তাঁদের নিয়োগ দিলে কার্যক্রমে আরও গতি আসবে।

‘আগের মতো প্রচার নেই’

সর্বশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০১৭-১৮ অনুসারে, দেশে প্রজননসক্ষম দম্পতির অর্ধেক এখনো আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন না। অনিয়মিত হয়ে পড়ার হারও বাড়ছে।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সরকারের এখন দৃষ্টি নেই বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকার জনসংখ্যা নীতি নিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এলে কার্যক্রমের গুরুত্ব কমে যেতে শুরু করে। এখন জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর প্রচারে মাঠকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যান না। এটা আবার শুরু করা দরকার। তিনি বলেন, চিকিৎসক, প্যারামেডিক, এফডব্লিউভি (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) ও মাঠকর্মীদের নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে সেবার মান উন্নয়ন ও প্রচারে গতি আনতে হবে।