প্রকৃতি রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে: আইইউসিএন মহাপরিচালক

আইইউসিএন বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিশেষজ্ঞরা
ছবি: প্রথম আলো

প্রকৃতিকে সুরক্ষা না দিয়ে মানুষের উন্নয়ন সম্ভব নয়। নিজেদের উন্নয়ন করতে গিয়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হলে সেই উন্নয়ন টেকসই হবে না। তাই প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করে উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন, বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ উপলক্ষে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের মহাপরিচালক ব্রুনো ওবারলি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। বৈঠকে তিনিও বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে ব্রুনো ওবারলি আইইউসিএনের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সংগঠনের সদস্যদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রত্যেকের দক্ষতা বাড়াতে সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়াতে হবে। কোথাও প্রকৃতি ধ্বংসের ঘটনা ঘটলে যার যার জায়গা থেকে অবস্থান নিতে হবে।

সভাটি সঞ্চালনা করেন আইইউসিএন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বড় শক্তি হচ্ছে উপকূল। সুন্দরবনের ওপরে আমাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান তৈরি হয়েছে। যেখান থেকে বিশ্ববাসী সমৃদ্ধ হতে পারে। আবার প্রভাবশালীদের মাধ্যমে দ্রুত বন ও জলাভূমি দখল হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা কী করব, তা ভাবতে হবে।’

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে। এ জন্য যথেষ্ট জ্ঞান ও প্রযুক্তি বাংলাদেশের আছে।

পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ন্যাকোমের নির্বাহী পরিচালক মনজুরুল হান্নান খান বলেন, বাংলাদেশে বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে পারস্পরিক মতবিনিময় হয় না। তাতে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও নীতিনির্ধারকদের পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় হয় না। যা সঠিক নীতি নির্ধারণে বড় বাধা।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের জলবায়ু বিভাগের প্রধান এম মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত শিল্পায়নের দিকে যাচ্ছে। আবার উপকূলীয় এলাকা লবণাক্ততার মধ্যে পড়ছে। সে কারণে দেশে উর্বর কৃষিজমি কমে আসছে।

জীববৈচিত্র্যবিষয়ক সংস্থা পৌষের পরিচালক তপন ঘোষাল বলেন, ‘আমাদের সুন্দরবনের মতো সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য আছে। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ কমে আসছে। কপোতাক্ষ ও সুন্দরবনের অন্যান্য নদ-নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জলাভূমিগুলো বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এগুলো রক্ষার ব্যাপারে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।’

বেলার পক্ষ থেকে বারিশ চৌধুরী বলেন, মানুষের চাপ ও দূষণের কারণে বনভূমি কমে আসছে। সেন্ট মার্টিনের মতো সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে। কক্সবাজারে সংরক্ষিত বন দখল করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে চাচ্ছে।

বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুর্শিদ বলেন, ‘দেশের নদীগুলো রক্ষার জন্য আমরা অনেক দিন ধরে কথা বলছি। কিন্তু বাস্তবে তা কাজে লাগে না। আমরা মুখে বলি ভূ-উপরের পানি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে ভূগর্ভের পানি তুলে বিপদ বাড়াচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে আইইউসিএন বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান হাসনা মওদুদ বলেন, বিশ্বের ১ শতাংশ সামুদ্রিক এলাকা সংরক্ষিত। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অংশ হিসেবে বঙ্গোপসাগরসহ বিশ্বের সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।

ওয়াইল্ড টিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বাঘ হচ্ছে বাংলাদেশের সুন্দরবনের পাহারাদার। আমরা বাঘ রক্ষায় কাজ করছি। তবে সুন্দরবনের প্রতিবেশ ব্যবস্থা সুরক্ষা দিলে বাঘ রক্ষা পাবে।’

বাংলাদেশে সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজ-বিসিএএসের নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রকৃতি সুরক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট এবং আয়তন অনুপাতে বিশাল জনসংখ্যা। জলবায়ু পরিবর্তন আসলে জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর একটি ফলাফল। বাংলাদেশের জন্য দারিদ্র্য বিমোচন, জ্বালানি শক্তি সররবরাহ করা এবং পরিবেশ সুরক্ষা একসঙ্গে নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমিন ও ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক রুনা খান।