মাদ্রাসাশিক্ষার্থী সানিম হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগে মানববন্ধন

মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সানিম হোসেন ‘হত্যার’ বিচারের দাবিতে মানববন্ধন। রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে, ১৭ মে ২০২৫ছবি: প্রথম আলো

লক্ষ্মীপুরের একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সানিম হোসেন হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘শিশু নিপীড়নবিরোধী ছাত্র–জনতার’ ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আবু রহমান খান বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষক পড়াশোনা না পারার কারণে বা অন্য কারণে পিটিয়েছে। এমন মারাত্মকভাবে পিটিয়েছে যে সেই শিক্ষার্থী মারা গেছে। এটাকে আসলে মৃত্যু বলার চাইতে হত্যা বলাটা বেশি জরুরি।’

আবু রহমান খান বলেন, ‘২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একটা পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। সেই পরিপত্রে বলা হয়েছিল, স্কুল বা মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে আঘাত করা যাবে না। তো মাদ্রাসা কি সেই পরিপত্রের বাইরে? মাদ্রাসা বাইরে না। তাহলে সেই পরিপত্র মানা হচ্ছে না কেন? এটা নিয়ে সরকারের ভূমিকা কী?’

মানববন্ধনে প্রাক্তন মাদ্রাসাশিক্ষার্থী ও বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী আব্বাস আব্দুল্লাহ (সামির) নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘হেফজখানায় যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটত এবং আমরা যদি তা বাসায় বলতে চাইতাম বা বাসায় বিচার দিতে চাইতাম, তখন আমাদের শিক্ষকেরা ভয় দেখাতেন। তাঁরা বলতেন, তুই যদি বাসায় এ কথা বলিস তাহলে তোকে আমরা এমন বদদোয়া দেব যে তোর জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে। এমনভাবে বলতেন যে আমরা ছিলাম ছোট মানুষ, আমরা কিছু বুঝতাম না।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (একাংশ) সভাপতি মেঘমল্লার বসু দাবি করেন, বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্টের পরে চারজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিহত হয়েছে। এসব ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার, এসব ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই খুবই স্পষ্ট ভাষায়, খুব স্পষ্ট করে বলে দিতে হবে যে বাংলাদেশে যদি আর একজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর ওপরও এই ধরনের নিপীড়ন হয়, তাহলে ছাত্রসমাজ বসে থাকবে না। স্কুল-কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুগপৎ আমাদের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং আমাদের মধ্যে যে কৃত্রিম বিভাজন তৈরি করা হয়েছে, তা থেকে বের হতে হবে।’

গত মঙ্গলবার (১৩ মে) লক্ষ্মীপুর শহরের আল মঈন ইসলামি একাডেমি নামের মাদ্রাসার শৌচাগার থেকে গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় সাত বছর বয়সী সানিমের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে ওই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র এবং আবাসিকে থেকে পড়াশোনা করত।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, শিশুটি আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু শিশুটিকে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগ করে তার পরিবার থানায় মামলা করেছে। এ ঘটনায় মাদ্রাসার এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন