মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় প্রশাসনের অন্দরমহলে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ৪ নভেম্বর ১৯৭১
ছবি: সংগৃহীত

ঘটনাবহুল আগস্টের মাঝখানে একটা ব্যাপার আমাকে ব্যক্তিগতভাবে উদ্বিগ্ন করে রেখেছিল। পি এন হাকসার ৪ সেপ্টেম্বর অবসর নেন এবং আমি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হই। এ রকম একটা কঠিন সময়ে এ ধরনের একটা পরিবর্তন মেনে নেওয়া আমাদের জন্য খুব কঠিন ছিল। হাকসার চলে যাওয়া মানে একটা কিংবদন্তির অবসান। রাশিয়ার সঙ্গে হাকসারের যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, আমার সেটা ছিল না। সংবাদমাধ্যমের লোকজনের কাছেও হাকসার ছিলেন বন্ধুবৎসল, এ ক্ষেত্রে আমি ছিলাম তাঁর অনেক পেছনে।

আমরা পূর্ব পাকিস্তান সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের অনুকূলে আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার বন্ধ করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতায় আসতে ইয়াহিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য সরকারগুলোকে উদ্বুদ্ধ করছিলাম। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার ও মুক্তিবাহিনীর অনুকূলে সমর্থন বৃদ্ধি করা হয়। মুক্তিবাহিনীর অব্যাহত লড়াইয়ের ক্ষমতা ইয়াহিয়াকে বুঝিয়ে দিচ্ছিল যে তাঁর সামরিক সমাধান কাজ করছে না। আপাতদৃষ্টে পরস্পরবিরোধী মনে হলেও আমাদের এই দুই নীতির একক উদ্দেশ্য ছিল একটি রাজনৈতিক সমাধান এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিহার।

এই দুই নীতিমালার অংশ হিসেবেই ইন্দিরা গান্ধী মস্কো, ব্রাসেলস, ভিয়েনা, লন্ডন, ওয়াশিংটন, প্যারিস ও বন সফর করেন। প্রথমেই তিনি যান মস্কোতে। কয়েক সপ্তাহ আগে মস্কোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় এ সফরে তিনি সোভিয়েত নেতৃবৃন্দকে ক্রম অবনতিশীল পরিস্থিতি এবং উপমহাদেশে যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হন। সোভিয়েতের উপলব্ধির ব্যাপারটা নিশ্চিত হয়ে তিনি অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পশ্চিমা ব্লকের দেশগুলো সফর করেন। সফরে যাওয়ার প্রাক্কালে ২৩ অক্টোবর দেশবাসী ও রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে এক বার্তা প্রদান করেন। তাতে সবাইকে শান্তভাবে ও ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা রাগান্বিত হয়ে বা চটজলদি কোনো কিছু বলতে বা করতে পারি না।’ বিদেশ সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দকে আমাদের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা এবং তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময় করা এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’

ইন্দিরা গান্ধী যখন তাঁর শান্তি অন্বেষণের সফরে, তখন পশ্চিম পাকিস্তানে যুদ্ধের জন্য জঙ্গি মনোভাব গড়ে তোলা হচ্ছিল। ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই ১১ আগস্ট ইয়াহিয়া খান কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং সিস্টেমকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘দুই দেশ যুদ্ধের খুব কাছাকাছি এসে গেছে। আমি আপনাদের এই বলে সাবধান করে দিতে চাই যে আমার দেশকে রক্ষা করার জন্য আমি যুদ্ধ করব।’ ২৯ আগস্ট লাহোরে জামায়াতে ইসলামীর [জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম] মহাসচিব মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ ঘোষণা করেন, ‘পাকিস্তানের নিজের স্বার্থেই সশস্ত্র যুদ্ধ করে আমাদের প্রতিবেশীকে আবার শিক্ষা দিতে হবে, যা তারা ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর ভুলে গেছে।’ জামায়াতের সিন্ধু প্রাদেশিক প্রধান পাকিস্তান সরকারকে এই বলে পরামর্শ দেয়, ‘জাতিকে ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।’ মুক্তিবাহিনীর ক্রমাগত সাফল্যে বিচলিত হয়ে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করে বসেন, ‘ভারতীয়রা যদি ভেবে থাকে যে যুদ্ধ ছাড়াই তারা আমার ভূমির এক কোনা দখল করে নিতে পারবে, তাহলে তারা বড় ভুল করবে। আমি আপনাকে এবং সারা বিশ্বকে সাবধান করে দিতে চাই যে এর মানে হলো যুদ্ধ এবং যুদ্ধ।’

রাজনীতিবিদ, ইসলামি মৌলবাদী, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি পুরো পাকিস্তানে যুদ্ধংদেহী মনোভাব তৈরি করে। তথাকথিত ‘আজাদ কাশ্মীর’ সরকারের প্রেসিডেন্ট সরদার কাইয়ুম খান ১৮ সেপ্টেম্বর এই বলে হুমকি দেন যে ‘ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ হবে দুই দেশে ধর্মের ভিত্তিতে শ্রেয় যুদ্ধ।’ যুদ্ধের হুমকি দেওয়া থেকে রাজনীতিবিদেরাও পিছিয়ে ছিলেন না। পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো সরকারকে এই বলে আশ্বস্ত করেন, ‘ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধে পিপিপি সর্বাত্মক সহায়তা দেবে।’ পাকিস্তান মুসলিম লীগের সভাপতি খান আবদুল কাইয়ুম খান ঢাকায় এসে ঘোষণা করেন, ‘পাকিস্তান ভাঙার ভারতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে মুসলমানরা একতাবদ্ধ। ভারত যদি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে যায়, তাহলে তাদের পালিয়ে বাঁচতে হবে।’ জামায়াতে ওলামায়ে পাকিস্তানের জেনারেল কাউন্সিলে এক প্রস্তাবে ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়। যুদ্ধের হুমকি যে শুধু ধমকধামক দিয়েই শেষ নয়, তা বোঝানোর জন্য পাকিস্তান সমগ্র পশ্চিম সীমান্তে সেনা মোতায়েন ও সেনা চলাচল বাড়াতে থাকে। সেই সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের যুদ্ধবিরতি সীমানায় সৈন্য সমাবেশ বাড়াতে থাকে, যা ছিল পুরোপুরি যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন। অক্টোবরের মাঝামাঝি পাকিস্তান তার বেশির ভাগ সৈন্যসামন্ত ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধপ্রস্তুতির অবস্থায় নিয়ে আসে।

আমাদের কাছে এটা খুব পরিষ্কার হয়ে যায় যে পাকিস্তানি শাসকেরা পূর্ব বাংলায় যে সংকট তৈরি করেছে, তার কোনো রাজনৈতিক সমাধানে না গিয়ে বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যুদ্ধোন্মাদনা ছড়াচ্ছে। সমগ্র মনোযোগ গৃহযুদ্ধ থেকে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। বর্ষা মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় নভেম্বরের প্রথম দিকেই মুক্তিবাহিনী তাদের আক্রমণ জোরদার করে এবং বাংলাদেশের বেশ কিছু এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। মুক্তিবাহিনীকে তাদের অবস্থান থেকে পিছু হটানোর উদ্দেশ্যে পাকিস্তানি বাহিনী সীমান্ত এলাকায় হামলা চালাচ্ছিল। ২১-২২ নভেম্বর রাতে এ রকম একটি যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যশোরের কাছে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। ট্যাংক, হেভি আর্টিলারি ও বিমানবাহিনী নিয়ে এই আক্রমণের একপর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করে ফেলে এবং ভারতের বয়রা এলাকার গ্রামে হামলা চালায়। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী তিনটি পাকিস্তানি বিমান গুলি করে ভারতীয় ভূখণ্ডে ভূপাতিত করে এবং বিমান থেকে প্যারাস্যুটে লাফিয়ে নামা পাইলট তিনজনকে আটক করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, এই আক্রমণের ঠিক আগের দিনই ইয়াহিয়া খান ভারতের উদ্দেশে তাঁর ‘বন্ধুত্বের হাত সম্প্রসারণের’ আহ্বান জানান এবং ‘নতুনভাবে সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক গড়ার আহ্বান’ জানান। আবার ঠিক এক দিন পরই ২৩ নভেম্বর ইয়াহিয়া খান জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। এ-সংক্রান্ত ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘বাইরের আগ্রাসনের কারণে পাকিস্তান হুমকির সম্মুখীন হওয়ায় সমগ্র দেশে জরুরি অবস্থা জারির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’

পাকিস্তানের সমস্যা পূর্ব পাকিস্তান নয় ভারতের সঙ্গে, এ দাবির সঙ্গে ইয়াহিয়ার এসব কথাবার্তা ছিল সংগতিপূর্ণ। দ্বিধা-দ্বন্দ্বপূর্ণ বিশ্ব জনমত থেকে তাঁকে এড়ানোর জন্য ইন্দিরা গান্ধী অবিলম্বে তাঁর অবস্থান সুস্পষ্ট করেন। ২৪ নভেম্বর সংসদের এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘নিজের সৃষ্ট অবস্থার দায় আমাদের ওপর চাপানোর জন্য তিনি (ইয়াহিয়া খান) এ ঘোষণা (জরুরি অবস্থা) দিয়েছেন।’ বয়রার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি পুরোপুরি স্থানীয়ভাবে নেওয়া পদক্ষেপ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কখনোই সংঘাতে যেতে চাইনি বা এ ধরনের পরিস্থিতির উসকানি দিইনি। আমাদের সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আত্মরক্ষার প্রয়োজন ছাড়া তারা যেন সীমান্ত অতিক্রম না করে।’ তিনি সংসদকে এই বলে আশ্বস্ত করেন, ‘পাকিস্তান জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেও আমরা এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেব না যদি না জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে পাকিস্তান আমাদের তা করতে বাধ্য করে। পাকিস্তানি শাসকদের অবশ্যই বুঝতে হবে, যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র দমনের চেয়ে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা ও সহাবস্থান অনেক বেশি ফলদায়ক।’

পি এন ধর
ছবি: সংগৃহীত

২১ নভেম্বরের ঘটনা নিয়ে আমি ও ডি পি ধর দীর্ঘ আলোচনায় মিলিত হই। ডি পি ধর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উসকানিমূলক ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য স্থানীয় কমান্ডারদের দায়ী করেন। এর আগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জুনিয়র অফিসারদের মারমুখী মনোভাব সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে আমরা যে রিপোর্ট পেয়েছিলাম, মূলত তার ভিত্তিতেই তিনি এ মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন। ডি পি ধর মনে করছিলেন যে আমাদের এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে ওসব মাথাগরম জুনিয়র অফিসারকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়া যায়, এমনকি তাতে যদি যুদ্ধ বাধে, তবু। আমি অবশ্য এ ব্যাপারে ভিন্ন মনোভাব প্রকাশ করেছিলাম এবং ইয়াহিয়ার যুদ্ধের হুমকিকে মৌখিকভাবেই নিয়েছিলাম। আমার কাছে ২১ নভেম্বরের ঘটনা ছিল আগামী দিনে যা ঘটতে যাচ্ছে, তার প্রাথমিক প্রকাশ।

ইয়াহিয়া খান ও তাঁর সৈন্যবাহিনীর যুদ্ধকে বেছে নেওয়ার হিসাব সম্পর্কে আমার পর্যবেক্ষণ ছিল এ রকম: পূর্ব পাকিস্তানে তিনি কোনো গ্রহণযোগ্য বেসামরিক শাসন কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে এবং এর নেতাকে বিচারের জন্য বন্দী করে আওয়ামী লীগের সঙ্গেও কোনো রকম সমঝোতায় আসার অবস্থা তাঁর ছিল না। সব মিলিয়ে যুদ্ধ ছাড়া তাঁর বিকল্প কোনো পথ ছিল না। জয়ী হওয়ার আশা না থাকায় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় কোনো ফল লাভ হতো না। বরং যুদ্ধে হেরে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হবে। এতে সিন্ধু ও বেলুচিস্তানে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে, যা সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করবে। এই অবস্থায় ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পূর্ব পাকিস্তান খোয়ানো অনেক ভালো। এই যুদ্ধের ফলে পাকিস্তান হয়তো জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পুরোটা না হলেও কিছু অংশ পেতে পারে এবং ভারতকে কাশ্মীর প্রশ্নে আলোচনার টেবিলে বসাতে বাধ্য করতে পারে, যেখানে পূর্ব বাংলা হারানোর ক্ষতিপূরণ হিসেবে কাশ্মীর আসতে পারে। পাকিস্তানিদের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধে জয়ী হওয়ারও একটা সম্ভাবনা ছিল চীনের সহায়তায়। নভেম্বরের প্রথম দিকে চীন সফর করার সময় ভুট্টো এ আশ্বাস পেয়েছিলেন বলেও দাবি করেছিলেন। তা ছাড়া যুদ্ধ পরিস্থিতি যদি পাকিস্তানের প্রতিকূলে চলেও যেত, তাহলে প্রধান শক্তিসমূহ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে বা ভারতের ওপর সরাসরি চাপ প্রয়োগ করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করে দিত। আমি আমার বিশ্লেষণের সমাপ্তি টেনেছিলাম এভাবে যে পাকিস্তানের হিসাব-নিকাশ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে এবং এখন আমাদের শুধু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা উচিত, যাতে ইয়াহিয়ার ঘাড়েই প্রথমে যুদ্ধ শুরু করার দায়টা এসে পড়ে। আমি ডি পি ধরকে নেপোলিয়নের সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিলাম, ‘যখন তোমার শত্রু কোনো ভুল করতে যাচ্ছে, তখন তাতে নাক গলিয়ো না।’ ডি পি ধর এটা মেনে নিতে রাজি হলেন।

২১ নভেম্বরের ঘটনার পর রাজনৈতিক সমাধানের আর কোনো আশাই ছিল না। আমরাও যুদ্ধ শুরু হলে তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সব রকম পরিকল্পনা জোরেশোরে এগিয়ে নিচ্ছিলাম। বয়রার ঘটনার আগেই ইয়াহিয়া খান এক মার্কিন সাময়িকীকে বলেছিলেন, ‘যুদ্ধ অনিবার্য নয়, এ কথা আমি আপনাকে বলতে পারছি না। কেননা, এটা অনিবার্য।...’ এবং বয়রার ঘটনার তিন দিন পরই তিনি ঘোষণা করলেন, ‘এই দশ দিন আমি হয়তো রাওয়ালপিন্ডিতে থাকব না, থাকব যুদ্ধের ময়দানে।’ তিনি অবশ্য তাঁর কথা রেখেছিলেন।

(সংক্ষেপ্তিত)

সূত্র: ১৯৭১: শত্রু ও মিত্রের কলমে, সম্পাদক: মতিউর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, প্রকাশকাল: জানুয়ারি ২০২০

অনুবাদ: আসজাদুল কিবরিয়া

পি এন ধর: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অন্যতম উপদেষ্টা