শিক্ষার হার বাড়াতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার হার বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ বুধবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠান হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার হার বর্তমানে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ থেকে আরও বাড়াতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর আমরা শিক্ষার হার ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করলেও বিগত বিএনপি সরকারের সময় এ হার কমে ৪৪ শতাংশে নেমে আসে। তবে আমরা (গত) বিএনপি সরকারের আমলের শিক্ষার হারকে বাড়িয়ে ৪৪ শতাংশ থেকে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ করেছি।’

সময়মতো পরীক্ষা আয়োজন ও ফল প্রকাশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়ম করেছিলাম, ফলাফল ৬০ দিনের মধ্যে দিতে হবে। এবার আপনারা ৬০ দিনের আগেই দিয়েছেন। তাই সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন তাঁর সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই। সে ক্ষেত্রে আমাদের আজকের ছেলেমেয়েরাই তো সোনার মানুষ।’
শেখ হাসিনা বলেন, বোর্ড পরীক্ষার পর অবসর সময়ে শিক্ষার্থীদের বনিয়াদি ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। যাতে তারা নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে। তাহলে তারা দেশ-বিদেশে চাকরি পেতে সুবিধা পাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ইনকিউবেশন সেন্টার ও ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ফলে পরীক্ষার নিয়মিত প্রস্তুতির পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা আইসিটিবিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে পারছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান যুগ ডিজিটাল ডিভাইসের যুগ। কাজেই সেদিকে শিক্ষার্থীরা আরও নজর দিলে সেখানে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তা ছাড়া তারা প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাসহ বহুমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বিএ, এমএ পাস করলে হবে না, একই সময়ে তাঁদের (শিক্ষার্থী) তথ্যপ্রযুক্তির ওপর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কারণ, বর্তমান যুগটা ডিজিটাল ডিভাইসের যুগ।

ছেলেমেয়েদের অযথা সময় নষ্ট না করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারীকরণ করে দিয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দিচ্ছে। ঘরের খেয়ে যেন ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা নিতে পারে, সেই সুযোগ তাঁরা করে দিচ্ছেন। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত তাঁর সরকার বিভিন্ন বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান করছে। বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার গবেষণার প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করেছে, যা একসময় দেশে ছিল না। ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে তিনি প্রথম গবেষণার জন্য পৃথক বরাদ্দ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি। এটা গবেষণারই ফসল।’

বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে বর্তমানে যে গবেষণা চলছে, তার সঙ্গে অন্যান্য ক্ষেত্রেও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা।

বিএনপির শাসনামলে শিক্ষায় বাংলাদেশ পিছিয়ে যায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমাদের একটা প্রকল্পও ছিল নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। প্রতিটি জেলা যেন নিরক্ষরতামুক্ত হয়, সে জন্য কয়েকটি জেলাকে নিরক্ষরতামুক্ত ঘোষণাও করেছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ২০০১ সালে আমরা আর সরকারে আসতে পারিনি। এর পর বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে সেসব প্রকল্প আর কার্যকর হয়নি।’

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়। এর প্রধান হাতিয়ার শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। তাই সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাঁর সরকার শিক্ষাকে বহুমুখীকরণ করেছে। সারা বাংলাদেশে, বিশেষ করে বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যাতে ছেলেমেয়েরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। ফলে শিক্ষার হারও বেড়েছে।

মাদ্রাসা শিক্ষাকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো সবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমরা অনেক মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করে দিয়েছি। শিক্ষকদের সরকারি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।’

মাদ্রাসাপড়ুয়াদের জন্য প্রযুক্তিশিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা।
২০২২ সালের এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা পাস করতে পারেনি, তারা যেন মন খারাপ না করে। সামনে ভালো করার জন্য নতুন করে যেন উদ্যোগ নেয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা কেন ফেল করবে?’

আরও পড়ুন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেখলাম, পাসের হারে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। এর মানে, ছেলেদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হওয়া দরকার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা খুব মেধাবী। একটু সুযোগ পেলে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারে।’

আরও পড়ুন