আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস উপলক্ষে বিশেষ টক শো
উচ্চশিক্ষায় ভূমিকা রাখছে ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাস
গতকাল (২৪ জানুয়ারি) ছিল আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস। এ উপলক্ষে প্রথম আলো ডটকম আয়োজন করে ‘বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের ভূমিকা’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রথম আলোর যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক দাতো ড. মোহাম্মদ সালেহ বিন জাফর এবং প্রভোস্ট অ্যান্ড রেজিস্ট্রার চ্যান জো জিম।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, সুযোগ এবং বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক মুনির হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে তো সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তারপরও কেন ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে তাদের শাখা চালু করতে আগ্রহী হলো?’
জবাবে ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের সহ–উপাচার্য দাতো মোহাম্মদ সালেহ বিন জাফর বলেন, ‘ইউসিএসআই মালয়েশিয়ার একটি শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। কিউএস র্যাঙ্কিং অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইউসিএসআই অন্যতম। এটা বিশ্বজুড়ে প্রসিদ্ধ একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার বেশ কিছু শিক্ষার্থী আমাদের মালয়েশিয়া শাখায় পড়াশোনা করেন। তাঁরা আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি দেখে আমাদের কাছে প্রস্তাব দেন বাংলাদেশেও একটি শাখা চালু করার জন্য।’
মোহাম্মদ সালেহ বিন জাফর আরও বলেন, ‘আমরা চাই, ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুধু মালয়েশিয়াতে নয়, বিশ্বব্যাপী পরিচালিত হোক। উচ্চতর শিক্ষার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অনেকেই কোথায় যাবেন, কোথায় ভর্তি হবেন—এসব নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান। বাংলাদেশের মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, বৈশ্বিক তুলনায় যা খুবই কম। তাই আমরা ভাবলাম, আমাদের শিক্ষার ধরনটা বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যেও প্রভাবিত করি। তাঁদের শিক্ষিত, দক্ষ করে তুলি। সেই প্রত্যাশা নিয়েই এখানে আমাদের ক্যাম্পাস শুরু করা।’
প্রভোস্ট অ্যান্ড রেজিস্ট্রার চ্যান জো জিম বলেন, ‘গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অনেক তরুণ মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ আছেন, ইউসিএসআই তাঁদের জন্য চাইলে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এ দেশের সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা সেখানে শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে কিছুটা সহযোগিতা করতে চাই বলে সরকারকে জানাই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রয়োজনীয় সহযোগিতার মাধ্যমেই আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করতে পেরেছি।’
এ পর্যায়ে সঞ্চালক মুনির হাসান বলেন, ‘ইউসিএসআই বাংলাদেশ শাখায় তৃতীয় সেমিস্টারের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি কি প্রধান ক্যাম্পাসের মতো বাংলাদেশেও পড়াশোনার একই মান বজায় রাখছে?’
জবাবে দাতো মোহাম্মদ সালেহ বিন জাফর বলেন, ‘আমরা ৩৬ বছরের সফল একটি প্রতিষ্ঠান। এই অভিজ্ঞতাই আমাদের আরও ভালো কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা সব জায়গায় একই মান বজায় রেখে শিক্ষা বিস্তারের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি।’
২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত তিন বছর ইউসিএসআই এ দেশে কাজ করছে। কীভাবে এখানকার শিক্ষার্থীরা স্থানীয় ও বিশ্ববাজারের কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হতে পারবেন—এই প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ সালেহ বিন জাফর বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই দেওয়া হয় না। আমরা হাতে-কলমে তরুণদের শিক্ষা প্রদান করে থাকি। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার পর শুধু পড়াশোনার দিকে মনোযোগী হয়, সিজিপিএ ভালো করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। তার চাকরির জন্য মাঠে নামে। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপদ্ধতিটাই কারিগরি, যা ছাত্রদের বিশ্ববাজারে চাকরির জন্য এগিয়ে রাখে।’
বাংলাদেশে ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় দুই সেমিস্টার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এই সময়ের অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার প্রসারে ভবিষ্যৎ পথচলাকে কীভাবে আরও মসৃণ করা যায়—মুনির হাসানের এই প্রশ্নের জবাবে ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের প্রভোস্ট অ্যান্ড রেজিস্ট্রার চ্যান জো জিম বলেন, ‘যখন শিক্ষার্থীরা স্কুলে থাকে, তখন তাদের এক রকম করে লালন-পালন করতে হয়। আবার যখন বয়স ১৭–১৮ বছর হয়, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া হয়, তখন তাদের শারীরিক ও মানসিক যত্ন নিতে হয় ভিন্নভাবে। তাই এই তরুণদের মানসিক বিকাশকে গুরুত্ব দিতে হবে। ক্লাসের ফাঁকে তাদের রিলিফ দরকার।’
চ্যান জো জিম বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি আছে, খেলার জায়গা আছে, স্টুডেন্ট ক্লাব, সোসাইট ক্লাব, ব্যাডমিন্টন-ক্রিকেট খেলার সুযোগ আছে, স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার আছে। এখানে ক্যাম্পাসের জায়গার ধরন ভিন্ন, তবে শিক্ষার্থীদের যত্নের ধরন একই। আমাদের নির্দিষ্ট প্রভাষক, ছাত্রদের উপদেষ্টা আছেন, যাঁরা ক্লাসের বাইরেও ছাত্রদের খোঁজখবর রাখেন। একদল দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
মুনির হাসান জানতে চান, ‘বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ ক্যাম্পাসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?’
উত্তরে দাতো মোহাম্মদ সালেহ বিন জাফর বলেন, ‘আমরা শুধু মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে চাই। বাংলাদেশে অনেক বুদ্ধিমান, পরিশ্রমী তরুণ আছেন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে তাঁরা কী করবেন বুঝে উঠতে পারেন না। আমরা তাঁদের জন্যই কাজ করব। পড়ার জন্যই পড়া নয়, মানসম্পন্ন পড়া এবং শিক্ষার্থীদের সঠিক দেখভালের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে যেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যোগ্য হয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারেন, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’