এবার অনুমতি নিয়ে কারাগারে অভিযানে যেতে হবে দুদককে

এমন নির্দেশনার ফলে কারাগারে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনার ক্ষমতা হারাল দুদক।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

অভিযোগ পেলে এত দিন যেকোনো কারাগারে তাৎক্ষণিক অভিযান চালাতে পারত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। এখন থেকে তা আর হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুদক ও কারা অধিদপ্তর—এই তিন পক্ষে মধ্যে আলোচনার পর এমন নির্দেশনা এসেছে।

এর ফলে কারাগারে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনার ক্ষমতা হারাল দুদক। আগেভাগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তারপর কারাগারে অভিযান চালাতে হবে।

এ–সংক্রান্ত কারা মহাপরিদর্শকের (আইজি, প্রিজন) একটি দাপ্তরিক চিঠিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট বা অন্য যেকোনো টিম কারাগারে কোনো তদন্তের জন্য গেলে চারটি প্রমাণপত্র আবশ্যিকভাবে প্রদর্শন করতে হবে। সেগুলো হলো যে জেলার কারাগারে যাবে, সেই জেলার বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত অনুমতিপত্র; সংশ্লিষ্ট কারাগারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কপি; আগত টিমকে তদন্তের দায়িত্ব প্রদানসংক্রান্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদেশ এবং আগমনকারী কর্মকর্তার পরিচয়পত্র।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করে কারা অধিদপ্তরকে অবগত করার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

১২ জুলাই কারা মহাপরিদর্শক (আইজি, প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক কারা অধিদপ্তরসহ সব জেলা প্রশাসক ও কারা কর্তৃপক্ষকে চিঠিটি পাঠান।

চিঠিতে তিনটি বিষয় সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাতে কারাভ্যন্তরে দুর্নীতি দমন কমিশনের এনফোর্সমেন্ট দলের প্রবেশ প্রসঙ্গে গত ১৫ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কারা মহাপরিদর্শক ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের আলোচনা এবং একই দিন স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে দুদকের সচিবের টেলিফোনে আলোচনার উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া কারাবিধি প্রথম খণ্ডের ৪৪ ও ৬৫ বিধিও উদ্ধৃত করা হয়।

এই তিন বিষয়ের উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, কারাবিধি মোতাবেক যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত কোনো ব্যক্তির কারাগারে প্রবেশের কোনো আইনি সুযোগ নেই। কারাগারগুলোয় কোনো রকম পূর্বানুমতি ছাড়াই অনেক সময় তদন্তের উদ্দেশ্যে দুদকের বিভিন্ন দল প্রবেশ করে। এ বিষয়ে সুরক্ষা বিভাগ, স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে দুদকের সচিবের আলোচনা এবং সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে কারাগারের স্পর্শকাতরতার বিষয়টি বিবেচনায় এনে উল্লিখিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

এ বিষয়ে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে যে কারাগারে খাবার নিয়ে অনিয়ম হয়। এনফোর্সমেন্ট টিম কারাগারে গেলে জেলার তাদের ভেতরে নিয়ে গিয়ে দেখান। এটা উচিত হয়নি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কারাগারের ভেতরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এটা আমার কর্মকর্তা (দুদক) এবং জেল কর্তৃপক্ষ—দুই পক্ষের আইনের অজ্ঞতার কারণে হয়েছে। এখন থেকে আগে অনুমতি নেবে, তারপর যাবে।’

দুদকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে মুঠোফোন ব্যবহারসহ বন্দীদের অবৈধ সুবিধা দেওয়া, বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, অসুস্থ না হয়েও অনেক বন্দীর হাসপাতালে ভর্তি থাকা, কারা ক্যানটিনে খাবারের দাম বেশি রাখা, বন্দীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে দুদকে।

এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন কারাগারে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে মুঠোফোনসহ বিভিন্ন অবৈধ উপকরণ উদ্ধার করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। সম্প্রতি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে অভিযান চালিয়ে এক বন্দীর কাছ থেকে অবৈধ মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করলে প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম, দুর্নীতি আছে, সেগুলো ধরা পড়বে—এটি কারা কর্তৃপক্ষ চাইছে না বলেই প্রতীয়মান হয় এ সিদ্ধান্তে। তা না হলে অনুসন্ধানের জন্য এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কথা নয়। এখানে বরং অনিয়ম সুরক্ষার বিষয় থাকতে পারে।’