তিন দশক পর গরু চুরির অভিযোগ থেকে পেলেন অব্যাহতি
গরু চুরির অভিযোগে তিন দশকের বেশি সময় আগে নীলফামারীতে করা এক মামলায় অব্যাহতি পেয়েছেন জয়পুরহাটের কাদোরা চকপাড়ার তোফাজ্জল হোসেন। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে তোফাজ্জলের ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০০ টাকা জরিমানা হয়েছিল।
সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ২০০৬ সালে হাইকোর্টে তোফাজ্জল আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন। এর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি রায় দেন। ১২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত বলেছেন, এই মামলায় এজাহার দাখিল, গ্রহণ ও তদন্তে ব্যাপক অবহেলা, অনিয়ম, অন্যায় হয়েছে। অন্যদিকে বিচারিক ও আপিল আদালতও গতানুগতিকভাবে রায় দিয়েছেন। সাক্ষ্য ও নথি পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণে উভয় আদালত চরম অবহেলা ও অনিয়ম করেছেন, যা বিচারকসুলভ নয়। অবগত ও পর্যালোচনার জন্য রায়টি অধস্তন আদালতের সব বিচারককে ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাতে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সব থানার এজাহার গ্রহণকারী ও তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, নীলফামারী সদর থানার ধোবাডাঙ্গা গ্রামের বৈকুণ্ঠ রায়ের ছেলে মানিক চন্দ্র রায় থানায় অভিযোগ করেন, ১৯৯৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁদের পরিবারের পাঁচটি গরু চুরি হয়। এসব গরুর দাম প্রায় ১১ হাজার ৭০০ টাকা। এ ঘটনায় করা মামলায় ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন নীলফামারীর প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রায় দেন। মামলায় তিন আসামির একজন জয়পুরহাটের কাদোরা চকপাড়ার তোফাজ্জলকে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জামিনে থাকা তোফাজ্জল তখন পলাতক ছিলেন।
নথিপত্রে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন নীলফামারীর প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে তোফাজ্জল আপিল করেন। ৯ বছর ৭ মাস ৭ দিন দেরিতে আপিলটি করা হয়। আপিলে এই দেরি মওকুফও চান। এই আপিল গ্রহণ করা হলো না উল্লেখ করে ২০০৬ সালের ৩১ জানুয়ারি আদেশ দেন নীলফামারীর দায়রা জজ আদালত। এর বিরুদ্ধে ওই বছরই হাইকোর্টে ফৌজদারি রিভিশন আবেদন করেন তোফাজ্জল। এই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে খালাস পেয়েছেন তিনি।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১৯৯৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদেশনামা অনুসারে, মামলার ২৫ ফেব্রুয়ারির প্রাথমিক তথ্যবিবরণীতে আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই। পরে ১৯৯৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির আদেশে দেখা যায়, আসামিদের ১৯৯৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫৪ ধারায় আটক করে এই মামলায় (গরু চুরি) গ্রেপ্তার দেখানোর প্রার্থনা করা হয়। কিন্তু ১৯৯৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আসামিকে গরুসহ থানায় হাজির করে গ্রেপ্তার করা হয়। এই আসামি কীভাবে ডোমার থানা–পুলিশের হাতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হন। এতে স্পষ্ট, প্রকৃতপক্ষে এই আসামির বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখের এজাহারটি মিথ্যা। এই আসামিকে ফাঁসাতে এজাহারকারী এই মিথ্যা মামলা করেন।
নীলফামারীর প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন তোফাজ্জলকে দেওয়া দণ্ডের রায় এবং আপিল গ্রহণ না করে ২০০৬ সালের ৩১ জানুয়ারি নীলফামারীর দায়রা জজের দেওয়া আদেশ বাতিল করে হাইকোর্ট তাঁকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আশেক মোমিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল লাকী বেগম ও ফেরদৌসী আক্তার। অবশ্য আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।