অবৈধ অস্ত্র নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময় সভা। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়, ঢাকা; ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ছবি: প্রথম আলো

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম হতে পারে। অবৈধ অস্ত্র নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হতে পারে।

মঙ্গলবার বিকেলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এ আলোচনা উঠে আসে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সঙ্গে এই মতবিনিময় সভাটি আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সঙ্গে এই মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী উপস্থিত ছিলেন।

সভায় রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে নিরাপত্তার উদ্বেগের বিষয়টিও উঠে আসে। জানা গেছে, সারা দেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়গুলোয় সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ১৮ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব কার্যালয়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার নির্দেশনা দিতে বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়গুলোতে পুলিশ দেওয়া হয়নি বলে আজকের সভায় কেউ কেউ জানিয়েছেন।

সূত্র বলছে, সভায় তখন জানানো হয়, এবার পুলিশের সংখ্যা কম। তাই সব রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে পুলিশ দেওয়া সম্ভব হবে না। এ কারণে অনেক জায়গায় আনসার দেওয়া হবে। পুলিশ ও আনসার মিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, এতে অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা বক্তব্য তুলে ধরেন। কেউ কেউ বলেছেন, একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না থাকায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। গণভোটের বিষয়ে এখনো ভোটারদের মধ্যে পরিষ্কার ধারণা নেই। উল্লেখ্য, কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না।

সভায় জানানো হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রচারণা বাড়াতে ভোটের গাড়ি ‘সুপার ক্যারাভান’ যাত্রা শুরু করেছে। এ ছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে প্রচারণার জন্য প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে। বৈঠকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রচার বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়।

সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার কথা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানান। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং নির্বাচন কমিশন থেকে জারি করা পরিপত্র অনুসরণ করে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাজ করার নির্দেশ দেন।

বিশেষ করে নির্বাচন পরিচালনায় আরপিওতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেটি প্রয়োগের কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। প্রচারের শুরুতেই সব প্রার্থীকে একটি বার্তা দেওয়ার জন্য বলেন, কেউ অন্যায় করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সারা দেশে বিদ্যমান ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযান আরও জোরালো করা হবে বলে সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন। যেসব এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটার বেশি, সেখানকার নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশও দেওয়া হয়। দুর্গম এলাকা ও সীমান্তবর্তী এলাকায় নির্বাচনী কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তার কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।