নিপীড়নের পরও সোচ্চার থাকেন লেখক: সেলিনা হোসেন

‘সাহিত্যের ভুবনে লেখকের পথচলা’ শীর্ষক বক্তৃতায় উপস্থিত ছিলেন সেলিনা হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

লেখকের চারপাশে এক অদৃশ্য শৃঙ্খল আছে। এই শৃঙ্খল রাষ্ট্রীয় কাঠামোর। ইচ্ছা করলেই যা কিছু করার অধিকার যেমন নেই, তেমন যা কিছু লেখার স্বাধীনতাও নেই। এ কারণেই সুকর্ণর আমলে ইন্দোনেশিয়ার ঔপন্যাসিক মুখতার লুবিস ১১ বছর জেল খেটেছিলেন। আফ্রিকার কবি কালো আদম বেঞ্জামিনের ফাঁসি তো সেদিনের ঘটনা। এত নিপীড়নের পরও লেখক সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার হন বলেই তিনি জাতির বিবেক। ‘সাহিত্যের ভুবনে লেখকের পথচলা’ বক্তৃতায় এসব কথা বলেন কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ নেহরীন খান স্মৃতি বক্তৃতা ও সম্মাননা অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, লেখকের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বারবার। তাঁর কর্তব্য নিয়ে বাকবিতণ্ডা আবশ্যক। এ এমন এক দায়িত্ব, যাকে নিয়মের নিগড়ে (শৃঙ্খলে) বাঁধা যায় না। এ হলো প্রমিথিউসের আগুন চুরি, যা অন্তর–প্রেরণা থেকে উৎসারিত। যে প্রজ্ঞা তাঁর সম্বল, তা দেশকাল মানে না, ইতর বিশেষ জ্ঞান করে না, তা ন্যায় এবং সত্যের পক্ষে লৌহকঠিন। যিনি এ দায়িত্ব পালনে অক্ষম, তার ভূমিকা গৌণ। যিনি পারেন, মহাকাল তাঁকে স্মরণ করে।

বাংলাদেশের লেখকদের প্রসঙ্গ টেনে সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের লেখকেরাও বিশ্ব–পটভূমির এই ধারাবাহিকতার বাইরে নয়। আমরা যদি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মূল্যায়ন করি, দেখব লেখকেরা এই ইতিহাসের মৌল উপাদান সৃষ্টিতে কত ব্যাপক এবং গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছেন। পাকিস্তান সরকার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাঙালির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর প্রতিবাদ করেছিলেন।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী, উপাচার্য এম এম শহিদুল হাসান। স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষক ফকরুল আলম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এ জেড এম শফিকুল আলম। অনুষ্ঠানের দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান।

উল্লেখ্য, নেহরীন খান ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খানের মেয়ে। লেখালেখিতে বিপুল উৎসাহী নেহরীন শুরু করেছিলেন বিষয়ভিত্তিক গবেষণা। ‘ঘর’, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘মোনালিসা’ ও ‘ভারতীয় নারীদের অবস্থান’ নিয়ে শুরু করা গবেষণাগুলো শেষ করে যেতে পারেননি। ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। ২০১৭ সাল থেকে নেহরীন খান স্মৃতি তহবিলের মাধ্যমে প্রতিবছর একজন সাহিত্যিককে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননা, স্মারক ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। পাশাপাশি ওই সাহিত্যিককে আমন্ত্রণ করা হয় নেহরীন খান স্মৃতি বক্তৃতায়। মহামারির কারণে গত দুই বছর বক্তৃতা অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল।