মুঠোফোন ব্যবহারকারী কমেছে ও জনগোষ্ঠীর অর্ধেক ইন্টারনেটের বাইরে

প্রতীকী ছবিসংগৃহীত

তিন বছর আগে দেশের মানুষের হাতে যত মুঠোফোন ছিল, তার সংখ্যা এখন কমেছে। এ সময়ের মধ্যে ১ শতাংশের বেশি মুঠোফোন ব্যবহাকারী কমেছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও শহর–গ্রামের পার্থক্য এবং নারী ও পুরুষের ব্যবহারের দিক থেকে বৈষম্যও অনেক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংযোগের আওতায় আনতে সরকার যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, সে তুলনায় আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২৪ মার্চ বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩-এর ফলাফল প্রকাশ করে। সেখানে আইসিটি সেবার বিষয়ে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর চিত্র পাওয়া যায়।

বিবিএস ৫ বছরের ঊর্ধ্বে ও ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তথ্য দিয়েছে। মূলত ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, ২০২০ সালে দেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারী ছিল ৭৫ শতাংশের বেশি। যা ২০২৩ সালে এসে হয়েছে ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ তিন বছরে মুঠোফোন ব্যবহারকারী বাড়েনি বরং কমেছে। অপর দিকে ৫ বছরের ঊর্ধ্বে ব্যবহারকারীর হিসাবে তিন বছরে বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

সেবা খাতের প্রায় সব ক্ষেত্রে শহর–গ্রামের পার্থক্য থাকে। যা তথ্য ও যোগাযোগ (আইসিটি) প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও রয়েছে। আর এ ব্যবধান অনেক। শহরের ৮২ শতাংশের বেশি মানুষের হাতে মুঠোফোন রয়েছে।  যেখানে গ্রামের ৭১ ভাগের মানুষের হাতে তা আছে।

যেকোনো সেবা খাতেই নারী–পুরুষের বৈষম্য রয়েছে। আইসিটি খাতে তা আরও বেশি। বিবিএসের তথ্যমতে, দেশের প্রায় ৬৩ শতাংশ নারীর হাতে এখন মুঠোফোন আছে। তিন বছর আগে এ সংখ্যা ছিল ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ মুঠোফোন ব্যবহারকারী নারী কমেছে।

দেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারী পুরুষের সংখ্যা ৮৬ শতাংশের বেশি। তিন বছর আগে ছিল ৮৭ দশমিক শতাংশ।

মুঠোফোন ব্যবহারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনা মহামারির বছর ২০২১ সালে ব্যবহারকারী কমেছিল। যা ২০২২ সালে এসে তা বেড়ে যায়।  কিন্তু ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালে তা সামান্যই বেড়েছে।

দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর তথ্যও তুলে ধরেছে বিবিএস। তাতে দেখা যায়, ১৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের ঊর্ধ্বে দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি। ২০২০ সালে ছিল ৪৩ শতাংশ, ২০২১ সালে ৪৩ দশমিক ৭ এবং ২০২২ সালে ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এখানেও নারী–পুরুষের ব্যবধান বেশি। দেশের ৫৮ শতাংশ পুরুষ ও ৪২ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

শহরের ৬২ শতাংশের বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। গ্রামে এ সংখ্যা ৪৬ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া গ্রামের নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সংখ্যা এখনো অনেক কম, ৩৮ শতাংশের কিছু বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আইসিটি খাতে সরকারের এত বিনিয়োগের পরও প্রাথমিক জায়গাতেই উন্নতি ঘটেনি। তিন বছরে মুঠোফোন ব্যবহারকারী না বেড়ে বরং কমেছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট সংযোগ প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য সরকার নানা প্রকল্প করেছে। এত সব বিনিয়োগের পরও এই চিত্র গ্রহণযোগ্য নয়। নারী–পুরুষ ও শহর–গ্রামের ব্যবধানও অনেক বেশি।

বি এম মইনুল হোসেন আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম স্তম্ভ ছিল কানেকটিভিটি (সংযোগ)। কিন্তু দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে রয়েছে।