চাকরিতে আগের মতো কোটা দাবি আদিবাসী ফোরামের
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে আগের মতো ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জন্য কোটা চাইল বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে কর্মসূচিতে এ দাবি ওঠে।
করোনার কারণে গেল দুই বছর আদিবাসী দিবসে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকাশ্য কোনো অনুষ্ঠান করেনি বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। এটি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের সবচেয়ে বড় সংগঠন। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় কেন্দ্রীয় আয়োজন। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বিভিন্ন সংগঠনের নেতা, গবেষক, বিভিন্ন জাতীয় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, এনজিও ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত হন সমাবেশে।
এবারের আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রথাগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে আদিবাসী নারী সমাজের ভূমিকা।’ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীরাই ঐতিহ্যগত খাদ্যব্যবস্থা ও ঐতিহ্যগত ওষুধপথ্যের জ্ঞানের ধারক। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীরা আদিবাসী ভাষা ও সংরক্ষণে চ্যাম্পিয়ন। তাঁরা পরিবেশ সংরক্ষণ ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানবাধিকার সুরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।’
আজ আদিবাসী দিবসের কেন্দ্রীয় এ আয়োজনে ১১ দফা দাবি ও ঘোষণা তুলে ধরেন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নেতা উজ্জ্বল আজিম। ঘোষণায় বলা হয়, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করেছিল। ২৪ বছরেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়নি। সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও ভূমি কমিশন গঠিত হয়নি।
আজ বিশ্ব আদিবাসী দিবসে আদিবাসী ফোরাম ১১ দফা দাবি তুলে ধরে। এর মধ্যে একটি ছিল সরকারি চাকরিতে আগের মতো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটা সংরক্ষণ। এর পাশাপাশি অন্য চাকরিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি কোটা বাস্তবায়নেরও দাবি করা হয়।
২০১৮ সালে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল করে সরকার। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পরই নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা। এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়। তবে শুরু থেকেই সরকারি এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছিল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংগঠনগুলো। আজ সেই দাবি আবার তুলে ধরা হলো। আজ চাকরিতে কোটা পুনর্বহালসহ যে ১১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়, সেগুলো হলো:
১. আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারসহ সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
২. রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. পার্বত্য চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে সময়সূচিভিত্তিক রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। ভূমি কমিশন আইন অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।
৫. সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
৬. ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমিতে তাদের স্বাধীন সম্মতি ছাড়া ইকোপার্ক, সামাজিক বনায়ন, ট্যুরিজম, ইপিজেড বা অন্য কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা চলবে না।
৭. ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর সব নিপীড়ন, নির্যাতন বন্ধ করাসহ সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৮. জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০০৭ সালে গৃহীত ‘আদিবাসীবিষয়ক ঘোষণাপত্র’ ও আইএলও ১৬৯ নম্বর কনভেনশন অনুসমর্থন ও আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৯. জাতীয় সংসদে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ কোটা সংরক্ষণ বা আসন বরাদ্দ রাখতে হবে।
১০. সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণিতে আগের মতো কোটা সংরক্ষণ করতে হবে এবং অন্যান্য চাকরিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি কোটা যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
১১. রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’ উদ্যাপন করতে হবে।