এবার ৮৫ কোটি ২৪ লাখ ডলারের তহবিল চাওয়া হয়েছে

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরফাইল ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য অষ্টমবারের মতো আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে। যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা বা জেআরপি নামের ওই আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তায় ২০২৪ সালের জন্য ৮৫ কোটি ২৪ ডলারের তহবিল চাওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও তাদের আশ্রয়দানকারী কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী মিলিয়ে সাড়ে ১৩ লাখ মানুষের জন্য ওই তহবিল নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গত কয়েক বছরের মতো এবারও ওই তহবিলের আওতায় অর্থ সংগ্রহ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আজ বুধবার জেনেভায় বাংলাদেশ, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও এর অংশীদার মানবিক সংস্থাগুলো জেআরপি ঘোষণার বৈঠকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অর্থ জোগানের আহ্বান জানিয়েছে।

জেআরপির কর্মপরিকল্পনাটি ও আনুষঙ্গিক আর্থিক চাহিদা জেনেভায় উন্নয়ন সহযোগীদের সামনে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি ও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক এমি পোপ।

যদিও স্থানীয় বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মিলিয়ে জনসংখ্যা সাড়ে ১৫ লাখ। তবে এবারের মানবিক সহায়তার পরিকল্পনা থেকে দুই লাখ বাংলাদেশি বাদ পড়ছেন। মোট সাড়ে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণের জন্য এবারের ৮৫ কোটি ২৪ লাখ ডলারের চাহিদা ধরা হয়েছে। মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের এই সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংহতি এবং শরণার্থীদের সুরক্ষা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

জাতিসংঘ বলছে, এই মানবিক সংকট যখন বৈশ্বিক মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে, তখন ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগণ ও দেশি–বিদেশি সাহায্য সংস্থাগুলোর প্রয়োজন টেকসই আন্তর্জাতিক সমর্থন। বিগত বছরগুলোর অপর্যাপ্ত তহবিল মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষদের জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তারা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে আর তাদের সমস্যা আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত জনবহুল শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জীবন পুরোপুরিই অনিশ্চিত আর তারা মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

জেআরপি ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, বিশ্বজুড়ে অন্যান্য সংকট থাকলেও রোহিঙ্গাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে অর্থায়ন নিয়ে।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, অর্থসংকটে রোহিঙ্গাদের দেখভাল আরও সংকট তৈরি করবে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চলেছে। তহবিলসংকটে তরুণদের হতাশা নিরাপত্তাহীনতা আঞ্চলিক নিরাপত্তার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও মানুষ দেশ ছাড়তে পারে। রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গা সংকটের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।

যৌথ কর্মপরিকল্পনায় যুক্ত থাকছে ১১৭টি সংস্থা, যার প্রায় অর্ধেকই বাংলাদেশি। এবারের পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে কক্সবাজার ও ভাসান চরে থাকা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা এবং ৩ লাখ ৪৬ হাজার বাংলাদেশিদের খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানি, সুরক্ষা পরিষেবা, শিক্ষা, জীবিকামূলক কাজের সুযোগ এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সহায়তা করা।

বাংলাদেশে প্রায় ৯৫ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই শরণার্থী জনগোষ্ঠীর ৭৫ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু, আর তারা শোষণ ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন টেকসই সহায়তা।

জেনেভার বৈঠকে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি রোহিঙ্গা সংকটের জন্য মিয়ানমারের সমালোচনা করেন। তাঁরা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

আরও পড়ুন