বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

গত বছরের ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরে জাহিদুল ইসলামসহ দুজনকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা
ফাইল ছবি

ঢাকার শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগের নেতা জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যা মামলায় বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। আলোচিত এই হত্যা মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী আজ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।

যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাঁরা হলেন জিসান ওরফে জিসান আহাম্মেদ ওরফে মন্টু ওরফে এমদাদুল হক (৫০), জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক (৪৫), গোলাম আশরাফ তালুকদার (৬৮), মারুফ আহমেদ মনসুর (৫৭), রিফতি হোসেন (৩৮), সোহেল ওরফে রানা মোল্লা (৪৫), আমিনুল ইসলাম (৩৫), সামসুল হায়দার (৪১) ও কামরুজ্জামান (৬২)। তাঁদের মধ্যে জিসান ও মানিক পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাঁরা বিদেশে পালিয়ে থেকে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

পলাতক এই ৯ আসামিকে গ্রেপ্তার করা গেল কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে আগামী ১৭ আগস্ট দিন রেখেছেন আদালত। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বছরের ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান ওরফে প্রীতিও (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় জাহিদুলের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এক বছরের বেশি সময় পর ৫ জুন ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলায় দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩), মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ (৩৭), শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫), মারুফ রেজা সাগর ওরফে সাগর (৪০), আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল (৪৫), জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন (৫১), তৌফিক হাসান ওরফে বাবু ওরফে বিডি বাবু (৩৬), মারুফ রেজা সাগর (৪০), মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু (৪০), নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক (৪৭), মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম (৩৬), ইয়াসির আরাফাত সৈকত (৩৩), আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল (৪৯), সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ (২৬), খাইরুল ইসলাম মাতব্বর ওরফে খোকা (88), আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮), ওমর ফারুক (৫২), মোহাম্মদ মারুফ খান (২৮), ইসতিয়াক আহম্মেদ জিতু (৩৯) ও ইমরান হোসেন ওরফে জিতু (৩২)। আর জামিনে আছেন তিন আসামি। তাঁরা হলেন হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ (৫০), মোরশেদুল আলম পলাশ (৫১) ও রাকিবুর রহমান (৩১)।

মামলার অভিযোগপত্রের তথ্য ও ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, মতিঝিলকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক আধিপত্য—এ দুই কারণে জাহিদুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। হত্যার পরিকল্পনায় বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ও জাফর আহমেদ ওরফে মানিকসহ ৩০ জনের নাম এসেছে। আর হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন তিনজন। সুমন শিকদার ওরফে মুসা পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেন।

ডিবি বলছে, দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে তদন্ত করে গুলি করে হত্যার ঘটনায় কয়েকজন অংশ নিয়েছিলেন, পরিকল্পনায় কারা ছিলেন, হত্যাকাণ্ডে কার কী ভূমিকা ছিল—সেসব তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, হত্যার পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নে একেকজনের একেক ধরনের ভূমিকা ছিল। এ হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ, তাঁর বন্ধু মোল্লা শামীম ও পলাশ ওরফে কাল্লা পলাশ। বাকিরা সবাই ছিলেন এ হত্যার পরিকল্পনাকারী।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিবি ‘শুটার’ মাসুম মোহাম্মদ আকাশকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর জবানবন্দিতে মূল পরিকল্পনাকারী সুমন শিকদারের (মুসা) নাম আসে। ডিবি ওমান থেকে গ্রেপ্তার করে গত বছরের জুনে ঢাকায় আনার পর আদালতে জবানবন্দি দেন মুসা। তাঁর জবানবন্দিতে এই হত্যায় জড়িত ১৬ জনের নাম উঠে আসে। তাঁদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ ও র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন ২৫ আসামি।

মামলার তদন্ত ও অভিযোগপত্র নিয়ে জাহিদুলের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীরা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত। অভিযোগপত্রে যাদের নাম এসেছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।