ঢাকার এমন পরিস্থিতির জন্য দুই মেয়রসহ সরকারি সংস্থাগুলো দায়ী

আদিল মুহাম্মদ খান

বছরে দু-তিনবার প্রবল বৃষ্টি হবে, এটা তো জানাই; কিন্তু ঢাকায় পানি সরানোর ব্যবস্থা কতটা কার্যকর? ড্রেনেজ নেটওয়ার্কের (পানিনিষ্কাষণের ব্যবস্থা) সঙ্গে জলাধারের সংযোগ কতটা আছে? বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকায় জলাধার ও সবুজ এলাকা যতটা থাকার কথা, তার চেয়ে কয়েকগুণ কম আছে।

সরকারি কর্তৃপক্ষই রাজধানীর জলাধার ভরাট করছে। পানি সরার জায়গায় ভবন নির্মাণ করেছে। একসময় আজিমপুর কলোনিতে প্রাকৃতিক জলাধার ছিল। সেখানে এখন ভবন হয়েছে। নকশার কারণে অনেক সড়ক উঁচু হয়ে গেছে। পানি সরতে পারে না। এ ক্ষেত্রে নকশার ত্রুটিও রয়েছে। অন্যদিকে ঢাকার

দুই মেয়র জলাবদ্ধতা নিরসনে শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছেন। ভারী বৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকায় অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের সীমাহীন ভোগান্তির জন্য রাজউক, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তর—সবারই দায় আছে। অন্যভাবে বলা যায়, যে পরিস্থিতি তৈরি হলো, তার জন্য দুই মেয়রসহ সরকারি সংস্থাগুলো দায়ী।

ঢাকা এখন কংক্রিট আচ্ছাদিত নগর। ভবন নির্মাণের সময় ৬০ শতাংশ জায়গায় ভবন ও ৪০ শতাংশ ফাঁকা জায়গা রাখার কথা। কিন্তু প্রায় শতভাগ জায়গাজুড়ে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। শুধু কংক্রিটভিত্তিক উন্নয়ন হতে থাকলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি বদলাবে না।

বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের প্রাথমিক যে নালা (লোকাল ড্রেন) তা সরু। সিটি করপোরেশন বড় নালা নিয়ে কাজ করে। অথচ সংকীর্ণ প্রাথমিক নালাগুলোর সক্ষমতা নেই। এই নালাগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। বৃষ্টির পানি নালায় যাওয়ার ক্যাচপিটগুলো (নালার ওপরের ছিদ্রযুক্ত ঢাকনা) বন্ধ থাকে। শুধু এ কাজটি করলেও বড় সুফল পাওয়া যেত। কিন্তু সিটি করপোরেশনের এসব কাজে মনোযোগ কম। অর্থনৈতিক লাভের সুযোগ থাকায় তারা বড় নালা নির্মাণে মনোযোগী।

জলাবদ্ধতা থেকেও আমাদের শিক্ষা হয়নি। ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) সংশোধন করে আবাসন প্রকল্পে ভবনের উচ্চতার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সরকার আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে ড্যাপে সংশোধন আনছে। যা ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতাকে আরও নষ্ট করায় ভূমিকা রাখবে।

জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে প্রাথমিক নালাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রাথমিক নালার সঙ্গে বড় নালাগুলোর সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন থাকতে হবে। খালগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্ক (সংযোগ) তৈরি করা ও ভবন তৈরিতে ৪০ শতাংশ ফাঁকা জায়গা রাখা নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারি-বেসরকারি পুকুর এবং ঢাকার বর্ধিত এলাকায় উন্মুক্ত এলাকা, জলাধার ও সবুজ এলাকা সংরক্ষণে উদ্যোগ নিতে হবে। বন্যাপ্রবাহ এলাকায় আবাসন প্রকল্প হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করে বন্যাপ্রবাহ এলাকা রক্ষা করতে হবে।

আদিল মুহাম্মদ খান, অধ্যাপক, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়