তিন বছর পর উৎসবমুখর ময়মনসিংহ 

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিজয়ী খুদে গণিতবিদদের সঙ্গে অতিথিরা। গতকাল বিকেলে ময়মনসিংহ নগরের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে
ছবি: আনোয়ার হোসেন

করোনার মহামারির কারণে তিন বছর আঞ্চলিক গণিত উৎসব আয়োজন ছিল অনলাইনে। এবার উৎসব হচ্ছে সশরীরে। এতে আনন্দিত শিক্ষার্থী নিলয় পাল। ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় ২০২০ সালে গণিত উৎসবে অংশ নিয়েছিল। এবার
ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী হয়ে উৎসবে অংশ নিল সে। নিলয় বলে, শুধু অনলাইনে পরীক্ষা দিয়ে আর পুরস্কার জিতে মন ভরে না।

নিলয় পালের মতো আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়া একই রকম। তারা বলছে, গণিত অলিম্পিয়াড এখন উৎসব। গতকাল শুক্রবার গণিত পরীক্ষার পাশাপাশি দিনভর গান, কবিতা আবৃত্তি আর প্রশ্নোত্তর পর্বে জমজমাট ছিল পুরো আয়োজন। গণিত উৎসবের এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে।

‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগান সামনে রেখে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এ অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে। এতে সহযোগিতা করে প্রথম আলো ময়মনসিংহ বন্ধুসভা। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুসভার সদস্যরা। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাহিদ মণ্ডল।

উৎসবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের ময়মনসিংহ শাখার ব্যবস্থাপক মো. গোলাম কিবরিয়া ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক দিল আফরোজ সুলতানা। এই পর্বে আরও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, ময়মনসিংহের পুলিশ লাইনস উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ভেন্যু প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তারের হাতে ভেন্যু স্মারক তুলে দেন ময়মনসিংহ বন্ধুসভার সভাপতি সুব্রত কুমার সিংহ। 

ময়মনসিংহে আঞ্চলিক গণিত উৎসবে ১ হাজার ২৭১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জের শিক্ষার্থীরা প্রাইমারি, জুনিয়র, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ৮০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ী শিক্ষার্থীদের সনদ, পদক ও টি-শার্ট দেওয়া হয়। বিজয়ীরা ঢাকায় গণিত উৎসবের জাতীয় পর্বে অংশ নেবে। 

উদ্বোধনী পর্বে বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার বলেন, আজকে যারা গণিত উৎসবে অংশ নিচ্ছে, তারা এক দিন পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি বিশ্ব পরিচালনা করবে। সাহসিকতার সঙ্গে তাদের এগিয়ে যেতে হবে।

ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের ময়মনসিংহ শাখার ব্যবস্থাপক মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক গণিত অলিম্পিয়াডের সঙ্গে যুক্ত আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। এ উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি কমানো সম্ভব হয়েছে গুণীজনেরা এতে যুক্ত থাকার কারণে। 

উৎসবের মূল আয়োজন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। এক ঘণ্টার এই পরীক্ষা শেষে ছিল সংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশন। সেখানে বন্ধুসভার সাবেক ও বর্তমান সদস্যরা বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নেন। এ পর্বে উপস্থিত শিক্ষার্থীও গান পরিবেশন করে। পরে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। এ পর্বে শিক্ষার্থীরা গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন করে। শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশ ‍কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক
শিক্ষক আবদুল হাই, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাইস্কুলের গণিতের শিক্ষক মোহাম্মদ গোলাম হক। প্রশ্নোত্তর পর্ব চলার সময় পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের কাজ চলে। দুপুরের পর ফলাফল ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় গণিত উৎসবের ময়মনসিংহ পর্ব।