দীর্ঘসূত্রতায় হয়রানির শিকার বিচারপ্রার্থী নারীরা

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন থাকলেও সাক্ষীর সুরক্ষায় আইন না থাকায় সাক্ষীরা নির্ভয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিতে পারেন না। তদন্ত থেকে শুরু করে মেডিকেল প্রতিবেদন ও বিচারকার্যের ধীরগতির ফলে মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। এসব কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থী নারীরা।

‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও প্রতিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস (২৫ নভেম্বর–১০ ডিসেম্বর) উপলক্ষে মঙ্গলবার অনলাইনে এ সভা আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

নারী নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ বাড়ানো, নির্যাতনের তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ, সহিংসতার কারণ নির্ণয় করে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া এবং সরকার, গণমাধ্যমসহ নাগরিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষায় সরকার নানাভাবে কাজ করছে। তবে নির্যাতন প্রতিরোধের কাজ আরও জোরালো করতে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী নির্যাতন একটি ঘটনা নয়, এটি অপসংস্কৃতি। এ অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জায়গাটিতে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। নারী নির্যাতনবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রগুলোকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। আর সমতাভিত্তিক সমাজ অর্জনে নারী ও পুরুষ দুই পক্ষকেই প্রস্তুত করতে হবে।

ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপকমিশনার হুমায়রা পারভীন বলেন, ডিএনএ প্রতিবেদন দেরিতে আসায় তদন্তে সময় লাগে। নারী নির্যাতনের অভিযোগের মামলা নিয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে যে বেশির ভাগই ‘ভুয়া মামলা’। এটা একেবারেই সত্য নয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেবিকা রায় বলেন, ডিএনএ ল্যাব আছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। এত মামলা, ল্যাব মাত্র তিনটি। এ কারণেও প্রতিবেদন দিতে দেরি হয়।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৭–এর বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আফরোজা ফারহানা আহমেদ বলেন, ওই আদালতে দেড় হাজার মামলা বিচারাধীন। কিন্তু পিপি মাত্র দুজন। অনেক মামলায় সাক্ষী হাজির করা যায় না। মেডিকেল প্রতিবেদনের জন্যও প্রমাণ কঠিন হয়ে যায়।

‘হাফ প্যান্ট পরায়’ মারধরের শিকার খুলনার বটিয়াঘাটার চার নারী ফুটবলারের একজন মঙ্গলী বাগচী সভায় যুক্ত হয়ে বলেন, মামলার চার আসামিই এখন জামিনে। তাঁরা আবার হুমকি দিচ্ছেন। তেমন কাউকে পাশে পাচ্ছেন না। সাক্ষীদের কেউ কেউ বড় অঙ্ককের টাকা দাবি করেছেন।

মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা, মনোবিজ্ঞানী নূজহাত-ই রহমান। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনটির লিগ্যাল অ্যাডভোকেসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক দীপ্তি সিকদার।