বর্ণগুলোর রূপকথার সাজ, দেখা যাবে বর্ণমেলায়

বর্ণমেলা উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিচারকেরা। চলছে বিজয়ী নির্বাচিত করার বিশ্লেষণ। কারওয়ান বাজার, ঢাকাছবি: দীপু মালাকার

বর্ণ কি শুধু সাদা কাগজে কালো কালিতেই ফুটিয়ে তোলার বিষয়? বর্ণেরা তো রূপকথার সাজেও সাজতে পারে! এই যেমন ‘ম’। এর ডান পাশে একটি গাছ জুড়ে দিয়ে তার সঙ্গে শাড়ি পরিহিত গালে হাত দেওয়া এক নারীও হতে পারেন কারও রূপকথার রাজ্যের ‘মা’। আবার ‘ই’–এর সঙ্গে গ্লিটার, চুমকি দিয়ে বানানো এক পরি বসে আছে। কাপড় দিয়ে বানানো ‘ক’–এর সাজও তো কম যায়নি!

নিজেদের কল্পনায় বর্ণকে এভাবেই সাজিয়েছে স্কুলপড়ুয়া খুদে শিক্ষার্থীরা। একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রথম আলো আয়োজিত ‘রূপকথার রঙে বর্ণ বানাও, বর্ণ পাঠাও’ প্রতিযোগিতায় এমন নানা রং ও ঢঙের বর্ণের দেখা মিলল। তিন বিভাগে শিশু থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়।

প্রতিযোগিতায় পাঠানো বর্ণগুলো নিয়ে বিচারকেরা আজ সোমবার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে বসেন। সেখানে সারা দেশ থেকে পাঠানো বর্ণ থেকে সেরা ৯টি বর্ণ বাছাই করা হয়।

এ প্রতিযোগিতায় আসা বাহারি সাজের বর্ণগুলো আগামী বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে আয়োজিত বর্ণমেলায় প্রদর্শন করা হবে। সেখানে দেখা মিলবে বোতাম ও বাদামের ‘ব’, পাতার ‘প’, চালের ’চ’, ম্যাচের কাঠির ‘ক’–এর মতো হরেক রকম বর্ণ।

এ প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান, আবদুল মান্নান, আনিসুজ্জামান সোহেল, ফারেহা জেবা, অশোক কর্মকার ও মাসুক হেলাল।

শিল্পী ফারেহা জেবা বলেন, এ ধরনের প্রতিযোগিতা বাংলার প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ বাড়াবে। শিশুদের কল্পনার যে নানা বৈচিত্র্য আছে, সেটা উঠে এসেছে। ছোট বাচ্চাদের কাজের বিচার করা কঠিন, কিন্তু বিষয়টি তিনি খুবই উপভোগ করেছেন।

আরেক বিচারক শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে বর্ণমেলার সঙ্গে যুক্ত। তিনি আশা করছেন, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আরও নতুন নতুন বিষয় উঠে আসবে।

বাহারি সাজের বর্ণগুলো স্থান পাবে বর্ণমেলায়। আগামী বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে বর্ণমেলার আয়োজন করা হয়েছে
ছবি: দীপু মালাকার

বিজয়ী যারা

এ প্রতিযোগিতায় শিশু থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বিভাগে বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম হয়েছে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসের অনিরুদ্ধ ঘোষ; দ্বিতীয় ঢাকা আর্ট কলেজের হাফিজা ইমাম এবং তৃতীয় বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসের সৃষ্টি বিশ্বাস।

চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত বিভাগে প্রথম হয়েছে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসের মুমতাহিনা হাসিন; দ্বিতীয় ঢাকা আর্ট কলেজের হিমাদ্রি হাসান ইমাম এবং তৃতীয় বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসের শ্রাবন্তী সাহা।

সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি বিভাগে প্রথম হয়েছে সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের লাবিবা মাহমুদ, দ্বিতীয় বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসের অস্মিতা সেন এবং তৃতীয় বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসের নিবেদিতা সাহা।

কোনটি সেরা? বিচারকদের বিশ্লেষণ চলছে
ছবি: দীপু মালাকার

মায়ের কাছে চিঠি

বর্ণমেলার আরেক প্রতিযোগিতা ছিল মায়ের কাছে যা বলতে ইচ্ছা করে, তা লিখে জানিয়ে দেওয়া। একজন খুদে শিক্ষার্থী হয়তো মায়ের কাছে বেশ বকাই খায়। চিঠিতে সোজাসাপটা বলে দিল, তাকে যেন বকা কম দেওয়া হয়। আরেকজনের আবার পোষা বিড়াল আছে। স্কুলের সময়টায় বিড়ালটির প্রতি যেন মা বাড়তি নজর দেন এবং তার প্রিয় চকলেট কেক থেকে কিছুটা বিড়ালকে খেতে দেন—চিঠিতে তা-ই লিখেছে।

এ রকম ৩৫টি চিঠি থেকে সেরা ১০টি চিঠি লেখককে বিজয়ী করা হয়েছে। বিজয়ীরা হলো আহনাফ মাহমুদ, মাইসা অজিয়া ওয়ারদা, সামরীন ইসলাম, কাজী রিসোনা ফাতেমা শারিন, আরাফি ইয়াশফিন আশরাফ, আনুশা হক, সুয়াইবা রূহী, আফসানা হায়দার, রাদ শাহামাত ও সায়ান আহমেদ।

চিঠি পড়ে সেরা চিঠি নির্বাচন করছেন বিচারকেরা
ছবি: দীপু মালাকার

দেশের গান

এক মিনিট ব্যাপ্তিতে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে রূপকথার রাজ্য মাতাতে ছিল ‘দেশের গানে মাতিয়ে দাও রূপকথার রাজ্য’ প্রতিযোগিতা। সারা দেশ থেকে ৩০০–এর বেশি প্রতিযোগী পাঠিয়েছে গানের ভিডিও ক্লিপ। সেখান থেকে বাছাইয়ে ২০ জন আজ প্রথম আলো কার্যালয়ে এসে অডিশন দিয়ে যায়। এর মধ্যে সেরা ১০ নির্বাচিত হয় অপরাজিতা সাহা, লিয়ানা তাজরিয়ান, জান্নাতিন তাজরি জোহা, উৎস মণ্ডল, সৃজিতা সরকার, অনন্যা বিশ্বাস, শায়েরী স্বস্তিকা, নুঝাত শারার, এ কে এম তাকিউল আহসান ও তাসমিয়া তাসনিম।

গানের প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন গীতিকার ও প্রথম আলোর কালচার ইভেন্টস অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্সের সমন্বয়ক কবির বকুল এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।

গানের প্রতিযোগিতার এই সেরা ১০ জন ২১ ফেব্রুয়ারি বর্ণমেলা প্রতিযোগিতায় মূলমঞ্চে গান পরিবেশন করবে এবং সেখান থেকে সেরা তিন বিজয়ী নির্বাচন করা হবে।