খাগড়াছড়িতে কিশোরী ধর্ষণ ও পাহাড়ি হত্যার শাস্তি দাবি ৩৬ নাগরিকের

বিবৃতিপ্রতীকী ছবি

খাগড়াছড়িতে কিশোরীকে ধর্ষণ এবং পরবর্তী সময়ে অবরোধ চলাকালে গুলিতে পাহাড়ি নিহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের ৩৬ বিশিষ্ট নাগরিক। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয় বলে জানা গেছে। এর প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে অবরোধ কর্মসূচি পালনের সময় গুইমারায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে তিনজন পাহাড়ি নিহত হন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি দোকানপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বাঙালিরাও এ ঘটনায় যুক্ত ছিলেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৭ জুন খাগড়াছড়িতে আরও একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসেও একটি মোটরসাইকেল চুরি এবং একজন বাঙালি নিহতের ঘটনায় সংঘর্ষে তিনজন পাহাড়ি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। এসব ঘটনার বিচার এবং কোনো সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। এসব ঘটনায় পাহাড়িদের বাড়িঘরে লুটপাট ও আগুন লাগানো হয় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে পাহাড়িরাই নিহত হন।

স্বাধীনতার পর থেকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নানামুখী বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তারা মৌলিক নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সাফল্যের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।

বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে কিশোরী ধর্ষণের সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান; সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা; ভিডিও ফুটেজে চিহ্নিত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং নিহত তিন পাহাড়িদের পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা; ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরের মালিকদের ক্ষতিপূরণ ও নিরাপত্তা দেওয়া।

বিবৃতিতে সই করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্না, ব্লাস্টের অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, নারী পক্ষের সদস্য শিরীন পারভীন হক, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, রেহেনুমা আহমেদ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, বেলার প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম, মানবাধিকারকর্মী নুর খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, সুমাইয়া খায়ের, সামিনা লুৎফা, তাসনীম সিরাজ মাহমুব, জোবাইদা নাসরীন, খাইরুল চৌধুরী, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের ভিজিটিং প্রফেসর স্বপন আদনান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজীম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নোভা আহমেদ, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আইনজীবী ফস্টিনা পেরেইরা, মিনহাজুল হক চৌধুরী, লিভারপুল স্কুল অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষক সাদাব নুর, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, এমএসএফের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, অধিকারকর্মী রোজীনা বেগম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, মানবাধিকারকর্মী আমিরুল রসুল, সাঈদ আহমেদ, অধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ, সাংস্কৃতিক কর্মী অরূপ রাহী ও মানবাধিকারকর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা।