কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রস্তুতিতে কেনিয়া–ঘানার চেয়েও পিছিয়ে বাংলাদেশ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রস্তুতিতে বিশ্বের ১৭৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৩তম। সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ। কেনিয়া, রুয়ান্ডা, ঘানা, সেনেগালের মতো আফ্রিকার দেশ এই সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এআই প্রস্তুতি সূচকে (এআইপিআই) এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ২৫ জুন সূচকটি প্রকাশ করা হয়।
ডিজিটাল অবকাঠামো, মানবপুঁজি ও শ্রমবাজার নীতি, উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক একীকরণ, নিয়ন্ত্রণ ও নীতি—এই চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সূচকটি তৈরি করা হয়েছে। সূচকে সর্বনিম্ন শূন্য থেকে সর্বোচ্চ ১ পর্যন্ত স্কেলে মান ধরা হয়েছে। শূন্য থেকে ওপরের দিকে যে দেশের মান (স্কোর) যত বেশি, সে তত বেশি এআইয়ের প্রস্তুতির জন্য অনুকূল অবস্থায় আছে।
সরকারিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে আইএমএফ। তথ্যসূত্রের মধ্যে রয়েছে—ফ্রেজার ইনস্টিটিউট, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাড, ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম।
এআইয়ের প্রস্তুতির সূচকে শূন্য দশমিক ৮০ মান নিয়ে শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর। আর সূচকে নিম্ন আয়ের দেশের তালিকায় থাকা বাংলাদেশের এআই প্রস্তুতির মান শূন্য দশমিক ৩৮।
সূচকের বিভিন্ন ভিত্তির মধ্যে ডিজিটাল অবকাঠামোয় বাংলাদেশের মান শূন্য দশমিক শূন্য ৯। মানবপুঁজি ও শ্রমবাজার নীতিতে শূন্য দশমিক শূন্য ৯। উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক একীকরণে শূন্য দশমিক ১১। নিয়ন্ত্রণ ও নীতিতে শূন্য দশমিক ১০।
এআই হচ্ছে বিজ্ঞানের এমন একটি ক্ষেত্র, যেখানে প্রযুক্তি তথ্য বিশ্লেষণ করে যুক্তি দিতে পারে, শিখতে পারে। পাশাপাশি তারা এমনভাবে কাজ করতে পারে, যার জন্য সাধারণত মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয়।
আইএমএফ ব্লগে সূচকটি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এআই উৎপাদনশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আয় বাড়াতে পারে। একই সঙ্গে তা লাখ লাখ চাকরি নিয়ে নিতে পারে। বাড়াতে পারে বৈষম্য।
এআই কীভাবে বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন আকার দিতে প্রস্তুত, তা আইএমএফের গবেষণায় ইতিমধ্যে উঠে এসেছে। গবেষণা অনুযায়ী এআই উন্নত অর্থনীতির দেশের ৩৩ শতাংশ, উদীয়মান অর্থনীতির দেশের ২৪ শতাংশ ও নিম্ন আয়ের দেশে ১৮ শতাংশ চাকরিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। অন্যদিকে এআই বিদ্যমান চাকরির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা নিয়ে আসছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ দক্ষতাভিত্তিক চাকরির ক্ষেত্রে উন্নত দেশের চেয়ে বেশির ভাগ উদীয়মান অর্থনীতি ও নিম্নআয়ের দেশ কম প্রভাবিত হবে। এসব দেশের ক্ষেত্রে চাকরিতে এআইয়ের প্রভাব কম পড়বে। তবে এসব দেশে এআইয়ের সুবিধা কাজে লাগানোর মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও দক্ষ কর্মীর অভাব আছে। এই বিষয়টি অন্যদের সঙ্গে এই দেশগুলোর বৈষম্য বাড়াতে পারে।
এআইয়ের সম্ভাব্য সুবিধাগুলো কাজে লাগানোসহ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এআই সামগ্রিক বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা রোধে নীতিনির্ধারকেরা কাজ করতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নত অর্থনীতির দেশে প্রায় ৩০ শতাংশ চাকরি এআইয়ের একীকরণ থেকে সুফল পেতে পারে। যেসব কর্মী প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ, তাঁদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। বাড়বে বেতন। আরা যাঁরা তা পারবেন না, তাঁরা পিছিয়ে পড়তে পারেন।
এআই প্রস্তুতির ক্ষেত্রে উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোকে ডিজিটাল অবকাঠামোসহ কর্মীদের প্রশিক্ষণে বিনিয়োগের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ ইতিমধ্যে এআই নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। এ ছাড়া এআই নিয়ে একটি আইনও করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এআই আইনের খসড়া তৈরি হবে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন।
আইএফএমের এআই প্রস্তুতি প্রতিবেদনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ দক্ষ মানবসম্পদ ও ডিজিটাল অবকাঠামোয় অনেক পিছিয়ে। শুধু কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট দিয়ে কাজ হবে না। এআইয়ের জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি লাগবে। সরকার এআই নীতিমালার খসড়া করেছে। আইনও করতে যাচ্ছে। কিন্তু সবার আগে মনোযোগ দিতে হবে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। তা না হলে এআইয়ের সুযোগ-সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উদ্ভাবনসহ তা কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগও কমবে।