কারাগারে গাদাগাদি, ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দী

কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ। রাজনৈতিক গ্রেপ্তারের কারণে বন্দী বাড়ছে দ্রুত।

দেশের কারাগারগুলো আগে থেকেই বন্দীতে ঠাসা। রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরুর পর কারাগারে বন্দী আরও বাড়ছে।

কারা অধিদপ্তরের ৫ নভেম্বরের হিসাবে, দেশে ৬৮টি কারাগারের বন্দী ধারণক্ষমতা ৪৩ হাজারের কম। তাতে রয়েছেন প্রায় ৮৮ হাজার বন্দী।

বন্দীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। সারা দেশে সাধারণ আসামির পাশাপাশি বিভিন্ন মামলায় রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠাচ্ছেন। ফলে কারাগারে বন্দী বাড়ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন, তখন কারাগারে বন্দী ছিলেন ৭৭ হাজারের মতো। কারা অধিদপ্তরের হিসাবে, এখন বন্দীর সংখ্যা ওই সময়ের চেয়ে ১০ হাজার ৬০৯ জন বেশি।

‘৪২ হাজার বন্দী রাখার ধারণক্ষমতা থাকলেও আমরা কারাগুলোতে ৯০ হাজার বন্দী রাখতে পারব। তাই আপাতত ধারণক্ষমতা বাড়ানোর দরকার নেই। প্রয়োজন হলে আমরা পরে ব্যবস্থা নেব।’
আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দলটির আট হাজারের বেশি নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কারাবিধি অনুযায়ী, একজন বন্দীর থাকার জন্য ন্যূনতম ছয় ফুট করে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের জায়গা থাকতে হয়। কারাগারে সেটা মানা সম্ভব হয় না। কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দী রাখতে হয় বলে তাঁরা কারাবিধি মানতে পারেন না। কারাগারে যথেষ্টসংখ্যক কারারক্ষী না থাকায় শৃঙ্খলা রক্ষা করাও কঠিন। ৬৮টি কারাগারে চিকিৎসক মাত্র ছয়জন। ফলে বন্দীদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। প্রভাবশালী বন্দীরা অবশ্য চিকিৎসার জন্য দিনের পর দিন হাসপাতালে থাকার সুযোগ পান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪২ হাজার বন্দী রাখার ধারণক্ষমতা থাকলেও আমরা কারাগুলোতে ৯০ হাজার বন্দী রাখতে পারব। তাই আপাতত ধারণক্ষমতা বাড়ানোর দরকার নেই। প্রয়োজন হলে আমরা পরে ব্যবস্থা নেব।’

‘যাঁরা ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের অবশ্যই দেওয়া হয়। আমরা প্রত্যেককে তাঁর ন্যায্য অধিকার দিচ্ছি। আমরা কাউকে নির্যাতন করছি না।’
সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, খুলনা, নরসিংদী ও জামালপুরে কারাগার নির্মাণ অথবা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। নির্মাণাধীন কারাগারগুলোর কাজ শেষ হলে বন্দী ধারণক্ষমতা বাড়বে।

কার্যত কারাগারে ধারণক্ষমতা বাড়াতে সময় লাগবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আশঙ্কা, আগামী দিনগুলোতে তাদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হবে। এতে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা আরও বাড়বে। ফলে মানবেতর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তার করা বন্ধ করে, আসামিদের সহজে জামিন দিয়ে এবং দ্রুত বিচার শেষ করার পর খালাসপ্রাপ্তদের মুক্তি দিয়ে কারাগারে মানবেতর পরিস্থিতি ঠেকানো যায়।

‘যেকোনো গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসন থাকা দেশে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচার শেষে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কারাভোগ শুরু করেন। বাংলাদেশে এক-তৃতীয়াংশ বন্দী বিচার চলা অবস্থায় কারাভোগ করেন। এটা আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে মেনে নিই। কারণ, এ দেশে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই বললেই চলে।’
শাহদীন মালিক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

বন্দী বেশি ঢাকা ও চট্টগ্রামে

নাশকতার মামলায় আটক বিএনপির নেতা–কর্মীদের আনা হয় আদালতে। এ সময় প্রিজন ভ্যান ঘিরে ভিড় করেন তাঁদের স্বজনেরা। গতকাল বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে
ছবি: দীপু মালাকার

দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ৫৫টি জেলা কারাগার মিলিয়ে মোট ৬৮টি কারাগার রয়েছে। আট বিভাগের মধ্যে বন্দী বেশি ঢাকা ও চট্টগ্রামে। ধারণক্ষমতার তুলনায় চাপ সবচেয়ে বেশি রাজশাহীতে।

ঢাকায় বন্দীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৮১১ জন। একজন বন্দী রাখার মতো জায়গায় রাখা হচ্ছে ২ দশমিক ৩ জনকে। চট্টগ্রাম বিভাগে কারাগারে রয়েছেন ১৭ হাজার ২৩৫ জন। একজন বন্দীর জায়গায় রাখা হচ্ছে ২ দশমিক ৪৭ জনকে। রাজশাহীতে একজন বন্দীর জায়গার বিপরীতে থাকতে হচ্ছে সোয়া তিনজনকে। সেখানে মোট বন্দী ১৩ হাজার ৫৯৮ জন।

দেশের শুধু একটি বিভাগে ধারণক্ষমতার তুলনায় বন্দী কম, সেটি সিলেট। খুলনা, ময়মনসিংহ ও বরিশালে ধারণক্ষমতার অনুপাতে বন্দীর সংখ্যা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মতো বেশি নয়।

কারা অধিদপ্তরের হিসাবে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) বন্দীর ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বন্দী ছিলেন ১০ হাজার ৮০৯ জন। সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অনেক বন্দীকে গাজীপুরের কাশিমপুরের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ৯ দিনে আদালত থেকে ৩ হাজার ২৫০ জন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়। এঁদের বেশির ভাগই রাজনৈতিক মামলার আসামি।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, বিধি অনুযায়ী যে সংখ্যক বন্দী থাকার কথা, দাঁড়িয়েছে তার তিন গুণ। একজন বন্দীর জন্য পর্যাপ্ত জায়গার দরকার হয়, যেহেতু তাঁরা বন্দী অবস্থায় থাকেন। তিনি বলেন, কারারক্ষীর সংখ্যাও কম। এ কারণে বন্দী ব্যবস্থাপনা করা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেই রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা এবং অনেক নেতা–কর্মী। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ১ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, কারাগারে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দুর্দশা এখন চরমে। তিনি বলেন, বিএনপির যেসব নেতা একসময় মন্ত্রী-সংসদ সদস্য ছিলেন, তাঁদেরও ডিভিশন দেওয়া হচ্ছে না। দিনের বেলায়ও তাঁদের সেলের ভেতরে আটক রাখা হয়।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য, তাঁদের অবশ্যই দেওয়া হয়। আমরা প্রত্যেককে তাঁর ন্যায্য অধিকার দিচ্ছি। আমরা কাউকে নির্যাতন করছি না।’

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, সেখানে বন্দী ধারণক্ষমতা এক হাজার জন। রয়েছেন আড়াই হাজারের মতো। কারাগারটির জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা প্রথম আলোকে বলেন, হাই সিকিউরিটি কারাগারের একেকটি সেলে একজন করে বন্দী থাকার কথা। কিন্তু আছে দ্বিগুণের বেশি। তাই একেক সেলে দু-তিনজন করে রাখতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যও আমাদের তেমন জনবল নেই, চিকিৎসক নেই।’

নারী বন্দীরাও দুর্দশায় রয়েছেন। কাশিমপুর মহিলা কারাগারের ধারণক্ষমতা ২০০ জন, বন্দীর সংখ্যা ৬২১।

হাজতি বন্দী বেশি

কারাগারগুলোতে হাজতি বন্দী বেশি। সংখ্যাটি ৬৭ হাজারের মতো, যা মোট বন্দীর ৭৬ শতাংশ। যাঁদের মামলার বিচার শেষ হয়নি, তাঁদের হাজতি বন্দী বলে। দেখা যায়, বিচার দীর্ঘ সময় ধরে চললেও অনেকে কারাগারে আটকে থাকেন। জামিন পান না। খুনের মামলার আসামিরাও জামিন পেয়ে যান।

যেমন রহিত হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট গ্রেপ্তার হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। এখনো তিনি জামিন পাননি, বিচারও শেষ হয়নি।

দুই বছর আগে ঢাকার মিরপুরে দিনদুপুরে কুপিয়ে যুবক সাহিনুদ্দিনকে (৩৩) খুনের ঘটনায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল জামিন পেয়েছেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আউয়ালের ইন্ধনে খুনটি করা হয়েছিল। আউয়াল এখন একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করছেন, যেটি সরকারের সঙ্গে থাকতে চায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসন থাকা দেশে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচার শেষে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কারাভোগ শুরু করেন। বাংলাদেশে এক-তৃতীয়াংশ বন্দী বিচার চলা অবস্থায় কারাভোগ করেন। এটা আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে মেনে নিই। কারণ, এ দেশে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই বললেই চলে।’

রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তার ও জামিন না পাওয়া প্রসঙ্গে শাহদীন মালিক বলেন, ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। এটা মেনে নেওয়ায় সবাই এর জন্য দায়ী।

চিকিৎসক মাত্র ছয়জন

দেশের ৬৮টি কারাগারের জন্য অনুমোদিত চিকিৎসক পদ রয়েছে ১৪১ টি। চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৬ জন। ফলে বন্দীরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পান না। কারাগারের চিকিৎসকেরা বলছেন, কারাবন্দীদের অনেকেই নানা রোগে ভুগছেন। কারও যক্ষ্মা, কারও ডায়াবেটিস, কেউ কেউ কিডনি, লিভারসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান (সদ্য কুমিল্লায় বদলি হয়েছেন) রোববার সকালের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, চুলকানি, জ্বর, কাশিসহ নানা রোগ নিয়ে তাঁর কাছে ৫০০ থেকে ৬০০ বন্দী এসেছিলেন। কারও কারও কিডনি রোগে ডায়ালাইসিস সেবাও দরকার। তিনি বলেন, ‘ভিআইপি’ বন্দীরা কারাগারের বাইরে কিছু হাসপাতালে সেবা নিতে পারেন। সাধারণ বন্দীদের বেশির ভাগের ভাগ্যে চিকিৎসা জোটে না। বন্দী বেশি হলে চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতেও সমস্যা হয় হয়।

মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, কারাগারে আলো-বাতাস কম পাওয়ায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হয়।

কারাগারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নারীদের চিকিৎসার জন্য কারাগারে গাইনি চিকিৎসক নেই। ফলে নারী বন্দীরা শরীরে নানা রোগ নিয়ে কারাগারে থাকেন।

‘দেখাব আলোর পথ’

কারা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে অভীষ্ট (ভিশন) হিসেবে বলা হয়েছে, ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’। লক্ষ্য (মিশন) হিসেবে বন্দীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা, যথাযথভাবে তাঁদের বাসস্থান, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং একজন সুনাগরিক হিসেবে সমাজে পুনর্বাসনের জন্য উৎসাহ ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বন্দীদের গাদাগাদি করে রেখে, চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা যথাযথভাবে না দিয়ে কি ‘সুনাগরিক হিসেবে সমাজে পুনর্বাসন’ করা সম্ভব—জানতে চাওয়া হয়েছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কারাগার সংশোধনের জায়গা হলেও সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, বন্দীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এখন তো অবস্থা আরও খারাপ।

কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে বন্দীদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র দেখার কথা উল্লেখ করে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, বন্দী বেশি হলে কোনো সেবাই যথাযথভাবে পাওয়া যায় না। এমন কী শৌচাগারে যেতেও লাইন ধরে থাকতে হয়। তিনি বলেন, বিচারে সাজা না হওয়া পর্যন্ত কেউ অপরাধী হিসেবে গণ্য হন না।