প্রথম আলো কার্যালয়ে ইউএন ওমেন প্রতিনিধি
সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব পালনে প্রথম আলোর ভূমিকার প্রশংসা করলেন ইউএন ওমেনের বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি (কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ) গীতাঞ্জলি সিং। তিনি প্রথম আলোর নারীবিষয়ক নীতিমালার প্রশংসা করে তা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও থাকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে গীতাঞ্জলি সিং রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রগতি ইন্সু্যরেন্স ভবনে প্রথম আলো কার্যালয়ে আসেন। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন, প্রথম আলোর ইংরেজি ওয়েবের প্রধান আয়েশা কবির, সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী এবং ইউএন ওমেনের যোগাযোগবিশ্লেষক শারারাত ইসলাম।
প্রথম আলোর সম্মেলনকক্ষে ইউএন ওমেন প্রতিনিধির সামনে প্রথম আলোর ছাপা ও অনলাইন সংস্করণ, ডিজিটাল বিভাগ, বিভিন্ন সাময়িকী, প্রথমা প্রকাশন, চরকি, বন্ধুসভা, প্রথম আলো ট্রাস্ট, প্রথম আলো পাঠশালা, শিক্ষার্থী বৃত্তি, অদম্য মেধাবী, অদ্বিতীয়াসহ বিভিন্ন উদ্যোগ এবং গণমাধ্যম ও সাংবাদিক শ্রেণিতে প্রথম আলো ও প্রথম আলো সম্পাদকের সর্বোচ্চ করদাতা হওয়াসহ দেশে ও বিদেশে প্রথম আলোর বিভিন্ন অর্জন নিয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবল দলকে নিয়ে ‘যে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে’ এবং বাল্যবিবাহ ঠেকানো সাত কিশোরীকে নিয়ে ‘সাত সাহসী’ শিরোনামে প্রথম আলোর তৈরি দুটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, প্রথম আলো একটি পত্রিকার চেয়েও বেশি কিছু। সমাজের জন্য প্রথম আলো ভালো কাজ করে। অ্যাসিড সহিংসতা প্রতিরোধে প্রথম আলো অ্যাসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন (এএসএফ) এবং ব্র্যাকের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছে। ২০ বছর আগের তুলনায় অ্যাসিড সহিংসতা এখন কমে এসেছে। মাদকের বিরুদ্ধে প্রথম আলো সচেতনতামূলক কাজ করছে। প্রথম আলো দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে থাকে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেনে উচ্চশিক্ষার জন্য দরিদ্র পরিবারের প্রথম মেয়ে সন্তানকে বৃত্তি দেয় প্রথম আলো। ওই মেয়েদের কেউ কেউ এখন বিদেশে কর্মরত। প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদ থেকেও ইতিবাচক অনেক পরিবর্তন এসেছে। নারী ফুটবল খেলোয়াড়দের গ্রাম কলসিন্দুরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছেছিল। এবারের সাফজয়ী নারী ফুটবল খেলোয়াড়দের হাতে দেড় কোটি সংগ্রহ করে তুলে দিয়েছে প্রথম আলো।
ইউএন ওমেনের এ দেশীয় প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং বলেন, প্রথম আলোর সামাজিক কর্মকাণ্ডগুলো খুবই প্রশংসনীয়। গণমাধ্যমের মধ্যে একমাত্র প্রথম আলোতে নারীবিষয়ক লিখিত নীতিমালা রয়েছে। এই মডেল কীভাবে অন্যান্য গণমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, কীভাবে জেন্ডার সমতার বিষয়ে লোকজনকে দায়বদ্ধ করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী তাঁরা। তাঁর মতে, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধের ওপরই বেশি জোর দেওয়া উচিত। একজন নারী কর্মস্থল থেকে বাড়িতে যেন নিরাপদে ফিরতে পারেন, সেই সুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
বাংলাদেশে জেন্ডার বৈষম্য এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা কমাতে কী ধরনের ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সে প্রশ্নের জবাবে গীতাঞ্জলি সিং বলেন, নারীর প্রতি মানুষের আচরণগত পরিবর্তন আসা প্রয়োজন। বাল্যবিবাহের মতো ক্ষতিকর চর্চা বন্ধ করতে সামাজিক চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসা দরকার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী অধিকার নিশ্চিতে খু্ব সচেষ্ট। তবে নারী–শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে বিচারপ্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকে, এটা একটি বড় সমস্যা। সেই সঙ্গে অপরাধ দমনের আইনগুলো বাস্তবায়নেও ঘাটতি রয়েছে। এ জায়গাগুলোতে জোর দিতে হবে।
সরকারের প্রতি যেকোনো দুর্যোগের সময় নারীর সমস্যাগুলো আলাদাভাবে বিবেচনা করে সে অনুসারে পদক্ষেপ নেওয়া, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যাগুলোর ওপর জোর দেওয়া এবং সহিংসতার বিষয়ে প্রকৃত উপাত্ত রাখার আহ্বান জানান গীতাঞ্জলি সিং।