সমঝোতা হয়নি, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ ছাত্রলীগের

গতকাল বিকেলে ছাত্রদের সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে সংঘর্ষ হয়
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্রলীগের দুই দফা সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখনো থমথমে। ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমঝোতা হয়নি।

সংঘর্ষের জন্য সোহরাওয়ার্দী হলের ৮ থেকে ১০ কর্মীকে দায়ী করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ। তাঁদের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তবে এসব অভিযোগ বানোয়াট বলেছেন হলের আরেক পক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম।

গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী ও আলাওল হলে তল্লাশি চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷ এতে অন্তত ছয়টি রামদা, রড ও বেশ কয়েকটি লাঠিসোঁটা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় কেউ আটক হননি।

গতকাল বিকেল পাঁচটায় হলের কক্ষ দখল নিয়ে পুরোনো বিরোধের জেরে সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে সংঘর্ষে জড়ান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ ‘বিজয়’-এর নেতা-কর্মীরা। পক্ষটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। এর আগে এই উপপক্ষ অমর একুশের প্রথম প্রহরে আলাওল হলের একটি কক্ষ দখল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। এতে ১২ জন আহত হয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং আরেকটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে নাছির অনুসারীদের ৯টি ও মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারীদের ২টি উপপক্ষ।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ৩১ জুলাই কমিটিতে পদ পাওয়া নিয়ে বিজয় উপপক্ষটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে আলাওল এবং এ এফ রহমান হলের নেতা-কর্মীরা মিলে একটি পক্ষ। আরেকটি পক্ষের নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলে থাকেন। সোহরাওয়ার্দী হলে এই পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম, পদবঞ্চিত দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েক নেতা। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ।

মোহাম্মদ ইলিয়াছ আজ প্রথম আলোকে বলেন, সোহরাওয়ার্দী হলের ৮ থেকে ১০ কর্মী এসব ঘটনার জন্য দায়ী। আলাওল এবং এ এফ রহমান হলে থাকা তাঁর কর্মীদের ডেকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্ররা বারবার হুমকি দিয়েছেন। জুনিয়রদের আটকে রেখে র‌্যাগ দিয়েছেন। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে দিয়ে গেলে স্লেজিং করছেন।

মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, দুই দিনের ঘটনায় এ এফ রহমান ও আলাওলের নেতা-কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছেন। তাঁদের ওপরে হামলা চালানো হয়েছে। এসব ঘটনায় দায়ী শিক্ষার্থীদের বিচার করতে হবে।

সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সোহরাওয়ার্দী হলে একক কোনো নেতা নেই ৷ যারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদের কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এসব বিষয়ে তিনি জানেন না ৷ তাই সমঝোতা হয়নি।

আরও পড়ুন

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন নজরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দুবারই তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। তারা কাউকে স্লেজিং, কিংবা হুমকি দেননি। এসব কথা বানোয়াট

নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সোহরাওয়ার্দী হলে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সংঘর্ষের পর তাঁদের নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলে অবস্থান নিচ্ছেন। আলাওল হলে ও বেশ কয়েকটি কক্ষ তাঁদের দখলে ছিল। কিন্তু ওই হলগুলো এখন ইলিয়াছের অনুসারীরা দখলে নিয়েছেন। কক্ষ থেকে ল্যাপটপ, ক্যামেরা, সনদ ইত্যাদি লুটপাট হয়েছে। এসব উপকরণ ফিরিয়ে দিলেই তাঁরা সমঝোতায় আসবেন। তাঁরা আর কোনো সংঘর্ষ বা সংঘাত চান না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে তিনি এসব ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। দুই পক্ষই নিজ নিজ হলে অবস্থান করছে। দুই হলের সামনেই পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত কমিটি এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে।

গতকাল সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে। সোহরাওয়ার্দী হলের বিজয় উপপক্ষের নজরুলের অনুসারী আল আমিন আবির নামের এক কর্মী খেলার জন্য আলাওল হলের মাঠে যান। সেখানে আলাওল হলে থাকা ইলিয়াছের কর্মীদের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। আল আমিন বিষয়টি তাঁদের পক্ষের নেতাদের জানালে এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে ইলিয়াছের অনুসারীরা লাঠিসোঁটা, রামদা ও ইটপাটকেল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হলের ভেতরে যান। সেখানে গিয়ে প্রাধ্যক্ষর কার্যালয়সহ মোট আটটি কক্ষ ভাঙচুর করেন। এরপর নজরুলের অনুসারীরাও রামদা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া দিলে ইলিয়াছের অনুসারীরা সোহরাওয়ার্দী হলের মাঠে অবস্থান নেন। আর নজরুলের অনুসারীরা অবস্থান নেন হলের মূল ফটকে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যেই প্রায় আধা ঘণ্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলে। এ সময় উভয় পক্ষের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী হেলমেট পরে সংঘর্ষে অংশ নেন।

সংঘর্ষে ইলিয়াছ পক্ষের এক নেতা আহত হন। তাঁর নাম নাম নয়ন মোদক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।