খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পরপরই খবর আসতে থাকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর আসতে থাকে। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, যুক্তরাজ্যের বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাঁর মৃত্যু নিয়ে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
রয়টার্স
যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স ‘৮০ বছর বয়সী বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যু’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়া এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা খালেদা জিয়া দীর্ঘ অসুস্থতার পর আজ মঙ্গলবার মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হয়েছে।
এএফপি
‘৮০ বছর বয়সে মারা গেলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া’—এমন শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন। তাঁর দল বিএনপির পক্ষ থেকে খবরটি জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনেকে আগামী বছরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়াকে আবার দেশের নেতৃত্ব নেওয়ার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখছিলেন।
বিবিসি
বিএনপির চেয়ারপারসনের মৃত্যুর খবর জানিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি শিরোনাম করেছে—‘৮০ বছর বয়সে মারা গেলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া’। খালেদা জিয়া যে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন, সে তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে ২০ বছর পর বাংলাদেশে হওয়া প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবিসির খবরে আরও বলা হয়, অসুস্থতা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নেত্রী আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য নিউইয়র্ক টাইমস–এর শিরোনাম ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মারা গেছেন’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং তিনবার এই দায়িত্ব পালন করেছেন—দুটি পূর্ণ মেয়াদ এবং একটি সংক্ষিপ্ত মেয়াদ। কয়েক দশক ধরে তিনি আরেক নারী নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ক্ষমতার পালাবদলে দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছেন।
আল–জাজিরা
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা শিরোনাম করেছে—‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যু, বয়স হয়েছিল ৮০ বছর’।
প্রতিবেদনে বিএনপি ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয়েছে। এতে খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক সরকারকে নেতৃত্ব দেওয়া দ্বিতীয় নারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ান
যুক্তরাজ্যের আরেক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান শিরোনাম করেছে—‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ৮০ বছর বয়সে মৃত্যু’। বিএনপির বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিনের কারাবাস এবং অসুস্থতা সত্ত্বেও খালেদা জিয়া গত নভেম্বর মাসে বলেছিলেন, তিনি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রচার চালাবেন। গত বছর গণ–অভ্যুত্থানে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার পতনের পর এটি প্রথম নির্বাচন। খালেদা জিয়ার দল বিএনপিকে অনেকেই সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে দেখছিল বলেও গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির বরাতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। তারা শিরোনাম করেছে—‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন’। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বিবৃতির বরাতে তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
সিএনএন
আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনও বার্তা সংস্থা এপির বরাতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারাও শিরোনাম করেছে—‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন’।
ডন
পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডনের শিরোনামে বলা হয়েছে—‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংবাদমাধ্যমটি খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে।
এনডিটিভি
‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন’—এমন শিরোনাম করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ অসুস্থতার পরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। প্রতিবেদনে খালেদা জিয়া সম্পর্কে বলা হয়, অনেকেই তাঁকে আগামী বছরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবার দেশের নেতৃত্ব নেওয়ার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখছিলেন।
আনন্দবাজার পত্রিকা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনে শিরোনাম করেছে— ‘প্রয়াত খালেদা জিয়া, দীর্ঘ রোগভোগের পর মৃত্যু বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর, বয়স হয়েছিল ৮০’।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘প্রয়াত হলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বয়স হয়েছিল ৮০। অশীতিপর বিএনপি নেত্রীর শারীরিক পরিস্থিতি কয়েক দিন ধরেই সংকটজনক ছিল। রাজধানী ঢাকার হাসপাতালে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল ৬টা নাগাদ (বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুসারে) হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তাঁর।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসেবে যেমন বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন হাসিনা, তেমনই খালেদার পরিচিতি ছিল জিয়াউর রহমানের স্ত্রী হিসেবে। স্বামীর মৃত্যুর পর অবশ্য নিজেই নিজের পরিচিতি তৈরি করেছিলেন খালেদা। হাল ধরেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি)। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা।
আনাদোলু এজেন্সি
‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন’—এমন শিরোনাম করেছে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।
বিএনপির বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থতায় ভোগার পর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশি রাজনীতিতে খালেদা জিয়াকে ‘আপসহীন নেত্রী’ বলে ডাকা হয়। তিনি এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ৯ বছরব্যাপী গণ–আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন।