রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় খোঁজার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি
ছবি: জেলেনস্কির এক্স হ্যান্ডল

জার্মানির মিউনিখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার সকালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন (এমএসসি) ২০২৪-এর ফাঁকে হোটেল বেইরিশার হফে দুই নেতার মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় বলেন আমরা সব ধরনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে। জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার সময় কীভাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা যায়, সে বিষয়েও তিনি বারবার আলোচনা করেছেন।’ হাছান মাহমুদ বলেন, বৈঠকে তাঁরা গাজায় নিরপরাধ নারী-পুরুষের ওপর হামলা কীভাবে বন্ধ করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন যে যুদ্ধ কারও জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের মাধ্যমে অন্যরা উপকৃত হতে পারে। কিন্তু যুদ্ধে লিপ্ত দেশগুলোর জন্য তা কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না এবং তাদের জনগণকে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ এবং তিনি নিজেও যে দুর্ভোগের শিকার হয়েছিলেন, সেই স্মৃতি স্মরণ করেন। তিনি যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বন্দিদশায় তাঁর অমানবিক কষ্ট ও তাঁর একমাত্র পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মের কথা স্মরণ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও জেলেনস্কির মধ্যে আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ স্পষ্টভাবে উঠে আসে।
এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই চমৎকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাশিয়া আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং যুদ্ধের পর বাংলাদেশের পুনর্গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।’ তিনি বলেন, তাঁরা শুধু যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনা করেছেন।

জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মো. নূর এলাহী মিনা ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন।

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের আগে একই স্থানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জার্মানির অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নবিষয়ক ফেডারেল মন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এর আগে শনিবার সকালে সম্মেলনস্থলে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই স্থানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর জেলেনস্কির টুইট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি বৈশ্বিক শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

বৈঠকের পর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে এক পোস্টে এ কথা বলেছেন জেলেনস্কি। পোস্টে বৈঠকের ভিডিও শেয়ার করেছেন তিনি।

জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমরা ইউক্রেনের শান্তির ফর্মুলা ছাড়াও বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। সেই ফর্মুলা বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ এবং বৈশ্বিক শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’

জার্মানির চ্যান্সেলরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শনিবার বিকেলে হোটেল বেইরিশার হফে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বৈঠককালে তাঁরা পারস্পরিক ও বৈশ্বিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন
ছবি: বাসস

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

নিজস্ব মুদ্রায় ভারতের সঙ্গে ব্যবসা বাড়ানোর ওপর জোর প্রধানমন্ত্রীর

বাংলাদেশ ও ভারতের নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশি টাকা ও ভারতীয় রুপি বিনিময়ের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে ব্যবসা করতে পারি। এটি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। তবে ব্যবসা সম্প্রসারিত করতে এটিকে আমাদের আরও বাড়াতে হবে।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর শনিবার মিউনিখে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। সকালে নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে হোটেল বেইরিশার হফে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর
ছবি: বাসস

পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, মার্কিন ডলারের মতো অন্যান্য মুদ্রার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জয়শঙ্কর নিজস্ব মুদ্রার মাধ্যমে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে এবং দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তা অন্য উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে।

দুই দেশের সম্পর্ক দিন দিন জোরদার হচ্ছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বৈঠকে দুই নেতা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।’ জয়শঙ্করকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে আমাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে।’