জনগণই তাদের রাস্তা থেকে উঠিয়ে দেবে: তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠুভাবে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে আজ সোমবার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা–সংক্রান্ত সভা করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ওই সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনিছবি: সংগৃহীত

সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের সড়ক ও রেললাইন অবরোধ সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাস্তা ছেড়ে ক্যাম্পাসে গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি তুলে ধরতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠুভাবে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে আজ সোমবার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা–সংক্রান্ত সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথাগুলো বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা ছাড়া তাঁরা রাস্তা ছাড়বে না। তাঁদের টানা রাস্তা অবরোধের কারণে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। আমারও নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। জনগণই তাদের রাস্তা থেকে উঠিয়ে দেবে। এরা লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলেছে। দিনের পর দিন তাদের দাবি–দাওয়া বেড়ে চলেছে। এটার পেছনে কারা জড়িত, আপনারা জানেন। কিন্তু প্রকাশ করেন না। সবকিছু আপনারা বিস্তারিত জানেন।’

এ সময় সাংবাদিকেরা জানতে চান, কারা জড়িত? জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি কেন বলব? আপনারা জানেন না? এটা আমি কেন বলব? জনদুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে রেললাইন ছেড়ে দিয়ে তারা তাদের ক্যাম্পাসে গিয়ে যত ধরনের দাবি আছে, তা কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে বলুক। গতকাল (রোববার) দেখেছেন, মধ্যরাত পর্যন্ত সবাই রাস্তায়। তাঁরা রাস্তা ছেড়ে দিক। জনগণকে যেন আর দুর্ভোগে না ফেলে।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আন্দোলন হচ্ছে, জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে, এটা জনগণকে বোঝাতে হবে। তাদের কী পরিমাণ ভোগান্তি হচ্ছে! শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া থাকলে আলাপ–আলোচনা হতে পারে। এ আলোচনা তাদের ক্যাম্পাসেও হতে পারে। জনগণকে দুর্ভোগে ফেলে রাস্তাঘাট অবরোধ করে জনগণকে কীভাবে ভোগান্তিতে ফেলেছে, আপনার সবাই দেখছেন। বুঝতে পারছেন। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। আপনারা (গণমাধ্যম) বলেন, তোমরা রেললাইন, রাস্তা অবরোধ কোরো না। তোমরা ক্যাম্পাসে আন্দোলন করো।’

এ সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তাহলে সরকারের ভূমিকা কী? তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আন্দোলন ও দাবি যুগে যুগে হয়েছে। আপনারা নতুন যুগের মানুষ। মানুষকে ভোগান্তিতে না ফেলে কীভাবে আন্দোলন করা যায়, তা জনগণকে বলবেন।’

এ সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রমাণ করতে হবে, কেন বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আরও অনেক কলেজ রয়েছে। তিনি বলেন, সাত কলেজের দাবির বিষয়ে সরকার সহানুভূতিশীল। কিন্তু তিতুমীর কলেজকে আলাদা করে বিশ্ববিদ্যালয় করা আরও অধিকতর পর্যালোচনার দাবি রাখে।

সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় করা ছাড়া তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে আরও দুটি দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, কলেজে আরও পিএইচডি অধ্যাপক দিতে হবে। আমরা দিয়েছি। আরও দেব। তাদের আরেকটি দাবি, গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সেটার সঙ্গেও আমরা একমত। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো হবে।’ তিনি বলেন, এই আন্দোলনের সঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী নেই। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ দেখতে চান।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ঢাকায় এখনো পুলিশ সক্রিয় নয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীন হয়েছি ৫৩ বছর। কাঙ্ক্ষিত উন্নতি কোনো বছরে হয়েছে কি না, আমি জানি না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ৫ আগস্টের পর যেটা ছিল, সেখান থেকে উন্নতি হয়েছে। আরও উন্নতির সুযোগ আছে। আমরা নিজেরা শতভাগ সন্তুষ্ট নই। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি উন্নতি করার জন্য।’

একুশে ফেব্রুয়ারিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নেওয়া সিদ্ধান্ত তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অন্যবারের মতো এবারও একুশে ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা শহীদ মিনারে যাবেন। এরপর উপদেষ্টারা যাবেন।

আরও পড়ুন