নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনায় প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রপ্রক্রিয়া চেয়ে রিটের শুনানি ২৯ জুন

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার ক্ষেত্রে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রপ্রক্রিয়া আহ্বান করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর শুনানির জন্য ২৯ জুন দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। শুনানির জন্য ওই দিন বেলা দুইটায় সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন নির্ধারণ করেন।

এর আগে রিটটি শুনানির জন্য গত ২৫ মে আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ‘অবকাশের পর’ শুনানির জন্য রাখেন। ৩ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি চলে।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, বেঞ্চটির আজকের কার্যতালিকায় রিটটি ৬২৬ নম্বর ক্রমিকে ওঠে, যার নিচে ২৯ জুন বেলা দুইটায় সময় লেখা রয়েছে।  

রিট আবেদনকারীর অন্যতম আইনজীবী আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অবকাশকালীন ছুটির পর গতকাল সোমবার রিটটি আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে আদালত শুনানির জন্য ২৯ জুন বেলা দুইটায় সময় নির্ধারণ করেন।

নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন ওই রিটটি করেন। ‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন রিটে যুক্ত করা হয়েছে।

রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীর ভাষ্য, ২০১৯ সালে সমঝোতা স্মারকের মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়। টার্মিনাল অপারেটর সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। জিটুজির ভিত্তিতে প্রকল্প কাজ পেতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে হয়। অথচ পিপিপি কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রজেক্ট প্রোফাইলে অনুমিত বিনিয়োগ হিসেবে ২০০ কোটি টাকা দেখা যায়, যা জিটুজি গাইডলাইন–২০১৭ সংশ্লিষ্ট বিধির পরিপন্থী।

রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, দেশীয় অপারেটরদের অনুমতি না দিয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না—এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার জন্য দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে। রিটে নৌ পরিবহন সচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে।

প্রথম আলোতে গত ২৬ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে এবং ভালোভাবে চলতে থাকা এই টার্মিনাল আওয়ামী লীগ আমলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ আমলের সেই ধারাবাহিকতা এগিয়ে নিচ্ছে। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালনার ভার দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরে সরব বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরা। আন্দোলন-বিক্ষোভও করেন তাঁরা।