মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত এক সঙ্গে কাজ করবে

ভারত সফর শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যেমন বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন, তেমনি ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন। ফলে দুই দেশ এ বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করবে। আজ সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর দপ্তরে সদ্য সমাপ্ত দিল্লি সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন।

দিল্লি সফরে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

মিয়ানমার ইস্যু নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। মিয়ানমারে এখন যে সংঘাত চলছে এটা আমাদের অঞ্চলে সমস্যা সৃষ্টি করছে। সেটা থেকে উত্তরণে আমরা একযোগে কাজ করব কীভাবে, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারতের সহায়তা চেয়েছি।’

মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত কীভাবে কাজ করবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। সুতরাং মিয়ানমারে কোনো পরিস্থিতি হলে সেটা আমাদের যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন করে, তেমনি ভারতকেও করে। মিয়ানমারকে নিয়ে দুই দেশেরই উদ্বেগ রয়েছে। সুতরাং আমাদের অনেকগুলো বিষয় আছে একসঙ্গে কাজ করার মতো। বিশেষ করে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সব সময় ভারতের সহায়তা চেয়েছি, এবারও চেয়েছি।’

আরেক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে তাদের যেসব বর্ডার গার্ড ও সেনাবাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিবারের যারা বাংলাদেশে এসেছে, তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। মিয়ানমার তাদের নিয়ে যাবে। আমি দিনক্ষণ বলতে চাই না, কারণ এটা গোপনীয়। এটাতে নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত আছে। তবে শিগগিরই মিয়ানমার তাদের ফেরত নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই তাদের ফেরত পাঠাতে পারব।’

মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ বাংলাদেশে ভেড়ার ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতার প্রশ্নে তিনি বলেন, মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং এটা শিগগিরই হবে। কখন কোন জাহাজ ভিড়বে, সেটা তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বলতে পারেন না।

মিয়ানমার সংকট ঘিরে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। আমরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছি। তাদের অভ্যন্তরীয় বিষয়ে এখানে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হোক, সেটা আমরা চাই না। আমাদের এখানে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই, সেটাও বলার সুযোগ নেই। আমাদের এখানে মর্টার শেল এসে পড়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আর সেটার কড়া প্রতিবাদ আমরা জানিয়েছি।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তের বাংলাদেশ মিশন থেকে কূটনীতিকদের সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেখানে যাঁরা কর্মরত, তাঁদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

নাফ নদীর তীরে অনেক রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছে, তাদের জন্য বর্ডার খুলে দেওয় হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন রেখে হাছান মাহমুদ বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আছে ১২ লাখ। এখন রোহিঙ্গাদের কারণে দেশে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। যেমন পরিবেশগত সমস্যা, নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, মাদকজনিত সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পক্ষে কি আরও রোহিঙ্গা আশ্রয় দেওয়া সম্ভব? আর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিয়েই সংঘাত চলছে তা নয়। তাদের মধ্যে নানা জাতিগোষ্ঠী আছে। তাদের মধ্যে নানা সমস্যা চলছে। সেই সংঘাতের উত্তাপের কারণে আমাদের দেশে আমরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়ব, সেটি কি সংগত?

বিএনপি বলেছে, মিয়ানমার ইস্যুতে সরকার তথ্য গোপন করছে—এ নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি তো বক্তব্য দিয়ে তাদের দলের অস্তিত্ব জানান দিতে চায়। এখানে মিয়ানমারের যতজন সদস্য আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে, সে বিষয়ে আমরা সময়ে–সময়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করেছি। এখানে লুকোচুরি করার প্রশ্নই আসে না। তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগিরই তাদের ফেরত পাঠাতে পারব।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি এসব বক্তব্য ও নানা কর্মসূচি দিয়ে তাদের হতাশা কাটানোর চেষ্টা করছে। আমরা চাই তারা গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্যে থাকবে। সরকারের প্রতিবাদ তারা করতেই পারে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস আর করতে দেওয়া হবে না।’

আরও পড়ুন