আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা কখনো পালায় না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। কেআইবি মিলনায়তন, ঢাকা
ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে আছে। ‘আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা কখনো পালিয়ে যায় না’, বরং তাঁর দলের একমাত্র লক্ষ্য দেশবাসীর জীবন ও জীবিকার উন্নয়ন।

‘আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না—বিএনপির এমন বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পালিয়ে যায়ওনি কখনো।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

বিএনপির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দল, যদিও তারা সংসদে নাই; বলে, আমরা নাকি পালাবার কোনো পথ খুঁজে পাব না। তারা হুমকি দিচ্ছে।’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, যিনি এই ভাষণ দিয়েছেন, তাঁকে তিনি মনে করিয়ে দিতে চান যে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পালিয়ে যায়নি কখনো। তিনি এক–এগারোর সরকারের সময় দেশে ফেরার কথা উল্লেখ করে বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান আর রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে ২০০৭ সালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এখন তারা, যাদের দলের নেতা একজন দণ্ডিত, তারা বড় বড় কথা বলছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা (বিএনপি নেতারা) তো  ইতিমধ্যেই পলাতক রয়েছেন। একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামির অধীনে তারা কীভাবে এত বড় কথা বলতে পারে?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হুমকি ও কঠোর বাধা সত্ত্বেও তিনি দেশে ফিরেছেন। ‘সে সময় আমি বিদেশে ছিলাম। তারা (এক–এগারোর সরকার) আমি দেশে ফিরি, তা চায়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাকে আসতে দেয়নি। সব আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সকে আমাকে নিয়ে ঢাকায় না নামতে বলা হয়েছিল।’ ঢাকায় তাদের অবতরণ করতে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এমন নির্দেশনা দেওয়ার পরও আমি জোর করে বাংলাদেশে ফিরে আসি।’ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, ‘দলের নেতা–কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে যারা বিমানবন্দরে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কিন্তু আমাদের নেতা–কর্মীরা তাতে কর্ণপাত করেনি বরং আমি যখন ঢাকায় অবতরণ করি, তখন হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমি সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ফিরে এসেছি।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এতে বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আলোচনা শেষে শোকের মাস উপলক্ষে কেআইবিতে রক্তদান অভিযানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার মতো গণহত্যা চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রায় ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, অনেককে নির্যাতন করা হয়েছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া এবং দখল করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা এমন অপকর্ম করেও টিকে থাকতে পারেনি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং সহনশীলতা দেখাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের ওপর বিএনপি কর্তৃক ২০০১ সালের পর দমন–নিপীড়ন চালানো এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি এর ১ শতাংশও প্রতিশোধ নিতাম, তাহলে এখন আপনার হদিস পাওয়া যেত না। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না।’

আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আমরা তাদের (বিএনপি) রাজনীতি করতে কোনো বাধা বা বিধিনিষেধ আরোপ করিনি। পুলিশের বাধার কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারত না অথচ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় সেখানে পুলিশ ছিল না।’

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেতাদের মনে রাখা উচিত যে খালেদা জিয়াকে ভোট কারচুপির অভিযোগে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর ৪৫ দিনও তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ২০০৬ সালে দেড় কোটি ভুয়া ভোটার নিয়ে আরেকটি নির্বাচনের পরিকল্পনা করেছিল (২০০৭ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল) কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বাতিল করা হয়েছিল।

তাদের অপকর্মের কারণে দুটি নির্বাচন বাতিল হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা এত বড় কথা কীভাবে বলে? এটা আমার প্রশ্ন।’

বিএনপির প্রচার-প্রচারণা ও আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হলো, এত টাকা তারা পাচ্ছে কোথা থেকে? সব চুরির টাকা কি এখন বের হচ্ছে? প্রতি মিটিংয়ে কত টাকা খরচ হচ্ছে? শেখ হাসিনা বলেন, মা-বাবা ও ভাইকে হারিয়ে এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয় নিয়ে এসেছি।’