সংস্কারের পর খুলেছে লালদীঘি মাঠ

আজ সোমবার দুপুরে মাঠ উন্মুক্ত করার সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অনেকে

চট্টগ্রাম নগরের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দান সংস্কারকাজের পর উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নতুন রূপে সাজানো হয়েছে মাঠের চারপাশ ও ভেতর। নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে মঞ্চ। সংস্কারকাজের জন্য প্রায় সাড়ে তিন বছর বন্ধ রাখা হয়েছিল এ মাঠ।

আজ সোমবার দুপুরে মাঠ উন্মুক্ত করার সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মমতাজ আক্তারসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

পাকিস্তানের শাসনে জর্জরিত বাঙালি জাতিকে মুক্তির পথ দেখাতে ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এসব দাবির পক্ষে ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে প্রথম জনসভা করেন শেখ মুজিবুর রহমান। এত দিন ধরে ঐতিহাসিক এ ময়দানকে ঘিরে ছিল না কোনো পরিকল্পনা। নগরের সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের এই মাঠটি অযত্নে-অবহেলায় পড়ে ছিল।

জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে লালদীঘি ময়দানে ছয় দফা দাবির স্মৃতি সংরক্ষণে প্রকল্প নেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় হয় ৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৪ ডিসেম্বর নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় চট্টগ্রামের অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে ‘সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের লালদীঘি মাঠের ৬ দফা মঞ্চ ও মাঠ সংস্কারকাজ’ শীর্ষক এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

সংস্কারের পর লালদীঘি ময়দানে শিশুদের জন্য আলাদা কর্নার রাখা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে হাঁটার পথ, বসার আসন। আগে মাঠটিতে কোনো ঘাস না থাকলেও এখন তা সবুজে ছেয়ে গেছে।

শুধু তা-ই নয়, ১৮টি টেরাকোটায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্বাচনী প্রচারণা, ৭ মার্চের ভাষণ, ৬ দফা আদায়ের দাবি আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভুত্থান, ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ৫৪’র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর প্রচারণা, ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ, ভাষা আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত ও মাস্টারদা সূর্য সেনের ম্যুরাল করা হয়েছে।

মাঠের আরেক পাশে সীমানাদেয়ালে আছে সরকারের কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের দেয়ালচিত্র। শিশু কর্নারে আছে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার দেয়ালচিত্র।

৬ দফা মঞ্চে ছয় দফার তিনটি করে দফা দুই পাশে সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়েছে। মাঝের অংশে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে জাতির পিতার সভা এবং ছয় দফার দাবিতে মিছিল সমাবেশের ছবি আঁকা আছে।

উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর মাঠে এসেছিল সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ফাহিম আরাফাত। মাঠ ঘুরে মুগ্ধ এই ছাত্রের কথা, ‘খুব সুন্দর হয়েছে মাঠ। এখন থেকে নিয়মিত খেলতে আসব।’

মাঠ খুলে দেওয়ার পর সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী খেলায় মেতে ওঠে। সংস্কারকাজের জন্য প্রায় সাড়ে তিন বছর বন্ধ রাখা হয়েছিল এ মাঠ

ফাহিমের সঙ্গে ছিলেন তার মা আফরোজা আক্তার। তিনি বলেন, নগরে শিশু-কিশোরদের জন্য তেমন কোনো মাঠ নেই। আবার থাকলেও খেলার পরিবেশ থাকে না। এখন লালদীঘির মাঠটি দেখে খুব ভালো লাগছে।

তবে সংস্কারের পর এই মাঠে খেলতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে নগরের একটি বিদ্যালয়ের ছাত্র বিশাল দাশ। সে জানায়, এটি সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ। সংস্কারের আগে এই মাঠেই তারা খেলত। কিন্তু এখন খেলতে দেবে কি না, বুঝতে পারছে না।

উন্মুক্ত করে দেওয়ার সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, লালদীঘি মাঠ সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়ের হলেও তার রক্ষণাবেক্ষণ করবে সিটি করপোরেশন। আর নিরাপত্তার জন্য আনসার সদস্য দেবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড।

এ ছাড়া এই মাঠে মানুষ সকাল-বিকেল হাঁটতে পারবেন বলে জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয় চলার সময় বিদ্যালয়ের ছাত্ররা খেলতে পারবে। বিদ্যালয়ের সময়ের পরে স্থানীয় শিশু-কিশোরেরাও খেলতে পারবে।  

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বড় বড় সমাবেশগুলো মূলত লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে রাজনৈতিকভাবে মাঠটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এ ছাড়া এখানে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় জব্বারের বলীখেলা।

সংস্কারের পর মাঠে সভা ও মেলা কি হবে, সে বিষয়েও কথা বলেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের অধীন একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি মাঠে সভা-সমাবেশের অনুমতির বিষয়টা দেখবে। আর বলীখেলা অনুষ্ঠিত হবে। তবে মাঠের ভেতরে মেলা বসতে পারবে না। মেলা মাঠের বাইরে বসবে।